রথ যাত্রা লোকারণ্য মহাধুম ধাম পুরীতে লোকারণ্য পাহাড় প্রমান। রথ যাত্রা বললেই সকলের মনে আসে পুরীর কথা। বঙ্গোপসাগরের তিরে এই মন্দির বার বার ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। একবার এই বাঙালির দাদাগিরিতেই রক্ষা পায় এই মন্দির। এই বীর বাঙালির নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র যিনি মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য (Chaitanya Mahaprabhu) নামে পরিচিত।
জানলে অবাক হবেন আজ যে জগন্নাথ মন্দির দাঁড়িয়ে আছে নিজের জায়গায় তাও এই মহান বাঙালির জন্য। কালাপাহাড় পুরী আক্রমণ কালে যখন এই জগন্নাথ মন্দির ভাঙতে আসেন, ঠিক তখন ই তার চোখে পড়ে মহাপ্রভুকে। কালাপাহাড় দেখেন, সেই জ্যোতির্ময় বঙ্গসন্তানের নেই কোনো ধর্মের বিচার। হিন্দু, মুসলমান, উঁচু নিচু সমস্ত জাতির মানুষকে তিনি আলিঙ্গন করছেন তাদের চিন্তনে মননে ভরে দিচ্ছেন জগন্নাথের নাম। কোথায় ভেদাভেদ কোথায় আমরা ওরা। এই দৃশ্য দেখেই কালাপাহাড় সেখান থেকে ফিরে যান আর কখনো তিনি এই পুরী মুখো হননি।
বছরের পর বছর পালিত হচ্ছে প্রাচীন এই উৎসব। আজ যে যুগে দাঁড়িয়ে ধর্মের বিচার, সাম্প্রদায়িক হিংসা দেশের প্রতিটি কোনায়। আজ ও যেখানে বাংলার বাইরে নিগৃহীত হতে হয় বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক বাঙালির উচিত এই মহান বঙ্গ সন্তানের দাদাগিরির কথা স্মরণ করা।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং তাকে ঘিরে বিশ্ববাসীর এই উন্মাদনার জন্য দায়ী কিন্তু এই বাঙালি। আজ বাঙালিরা পুরীতে যান বা জগন্নাথ দর্শনে যান সেই মহান বাংলার সন্তানকে মনে করতে, তার স্মৃতি ছুঁয়ে দেখতে। তিনি আর কেউ নন স্বয়ং মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য। ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জেলার নবদ্বীপে জন্মানো এই বাঙালি সারা জীবন বিপ্লব করে গেছেন যা আজকের দিনে কেউ হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। বিশেষত এই জগন্নাথ মন্দির রক্ষায় এই মানুষটির ভূমিকা স্বীকার করতেই হয়।
মাত্র ২১ বছর বয়সে মহাপ্রভু আসেন এই জগন্নাথ ধামে। তারপর থেকে জীবনের শেষ দিন অব্দি ছিলেন এই পুরীতেই। তার জীবন কিভাবে শেষ হল তা বিতর্কিত। তবে তিনি সারা জীবন ধরে কি ধরণের বিপ্লব করেছেন তা আজও সবাইকে অবাক করে। আজ এই ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ নিয়ে আমরা ওরা র লড়াই চলছে।
তবে আজ ও যেমন হয় সেদিনটি ছিল তার চেয়েও অনেক ভয়ঙ্কর। তৎকালীন পান্ডারা রাখতে চায়নি মহাপ্রভুর স্মৃতি। কিন্তু মহা রথযাত্রার এই প্রাক্কালে এই মহান বঙ্গ সন্তানকে স্মরণ না করলে বাঙালি শত জন্মেও নিজেদের ক্ষমা করতে পারবে বলে মনে হয়না। বিশেষ করে তাকে মনে করতেই হয় কারণ আজ তার জন্যেই দাঁড়িয়ে আছে এই শতাব্দী প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির।
চলছে সাম্প্রদায়িক হানাহানি এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ভারতের রাজনীতি। কিন্তু তৎকালীন সময়ে যখন ধর্মের গোঁড়ামি চরমে, ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়ে তিনি শিষ্য করেছেন এক মুসলমান মুচি হরিদাস কে। ভীষণ প্রসঙ্গত ভাবেই বলতে ইচ্ছে হয় তৎকালীন সময় একজন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হয়ে এই ধরণের বিপ্লব যুগান্তকারী।