কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বিহারের সীতামঢ়িতে এক জনসভায় রাষ্ট্রীয় জনতা দল (Home Minister)-কে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, আরজেডি তাদের শাসনকালে বিহারের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি, বরং রাজ্যে গুন্ডামি ও অরাজকতাকে উৎসাহিত করেছে। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে।
সীতামঢ়ির পুনৌরা ধামে মা সীতা মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শাহ এই মন্তব্য করেন। এই অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও উপস্থিত ছিলেন। শাহের এই বক্তব্য আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আরজেডির বিরুদ্ধে অমিত শাহের অভিযোগ
সীতামঢ়ির জনসভায় অমিত শাহ আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদব এবং তাঁর দলের শাসনকাল (১৯৯০-২০০৫)কে ‘জঙ্গল রাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “আরজেডি বিহারের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। তাদের শাসনকালে দুর্নীতি, অরাজকতা এবং গুন্ডামি রাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
গোচরণ কেলেঙ্কারি এবং বিটুমিন কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা বিহারের জন্য কলঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” শাহ অভিযোগ করেন, লালু প্রসাদ কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকাকালীন বিহারের উন্নয়নের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ করেননি। তিনি আরও বলেন, “আরজেডি এবং কংগ্রেস বিহারকে ধ্বংস করেছে। নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহার এখন উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে।”
এনডিএ-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
অমিত শাহ দাবি করেন, এনডিএ আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৫) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে। তিনি বলেন, “বিহারের জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা ‘জঙ্গল রাজ’ চায়, নাকি মোদী ও নীতীশের নেতৃত্বে উন্নয়নমুখী সরকার চায়।” শাহ জোর দিয়ে বলেন, এনডিএ সরকার বিহারের সমস্ত চিনি কলকে পুনরায় চালু করবে।
রাজ্যকে বন্যামুক্ত করতে পাঁচ বছরের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি পুনৌরা ধামে মা সীতা মন্দিরের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, “অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পর এখন সীতামঢ়িতে মা সীতার জন্মস্থানে একটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করা হবে। এটি বিহারের ধর্মীয় পর্যটনকে আরও উন্নত করবে।”
সীতা মন্দির প্রকল্প ও রাজনৈতিক তাৎপর্য
সীতামঢ়ির পুনৌরা ধামে মা সীতা মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অমিত শাহ এবং নীতীশ কুমার উপস্থিত ছিলেন। এই প্রকল্পটি এনডিএ-র জন্য আসন্ন নির্বাচনে একটি প্রধান ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিহার বিজেপি সভাপতি দিলীপ কুমার জয়সওয়াল বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পর সীতামঢ়িতে মা সীতার মন্দির নির্মাণ বিহারের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং এবং চিরাগ পাসওয়ানও এই উদ্যোগকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে বিহারের ধর্মীয় পর্যটনের জন্য গেম-চেঞ্জার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, ভক্তদের সুবিধার জন্য সীতামঢ়ি-দিল্লি অমৃত ভারত ট্রেনের উদ্বোধনও এই দিনে করা হয়েছে।
আরজেডি-র প্রতিক্রিয়া
আরজেডি অমিত শাহের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। আরজেডি মুখপাত্র সরিকা পাসওয়ান বলেন, “বিহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য পরিচিত। লালু প্রসাদ সবসময় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন। সীতা মন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে, কিন্তু এটি বিহারে কাজ করবে না।”
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন, নীতীশ কুমারের সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) মাধ্যমে সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, “এনডিএ সরকার ২০ বছরের পুরনো। এটি এখন একটি জরাজীর্ণ গাড়ির মতো।”
নির্বাচনী প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রচারণা ইতিমধ্যে জোরদার হয়েছে। এনডিএ, যার মধ্যে বিজেপি, জেডি(ইউ), এলজেপি(আর), এবং এইচএএম(এস) রয়েছে, বর্তমানে ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় ১৩১টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে।
বিপরীতে, আরজেডি-নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লকের ১১১টি আসন রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে বেকারত্ব, অভিবাসন, এবং জাতিগত সমতার মতো বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এনডিএ উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে, যখন আরজেডি যুব ও সংখ্যালঘুদের উপর জোর দিয়ে এনডিএ-র বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শাসন ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে।
২০২৫ সালের আয়কর বিল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
অমিত শাহের সীতামঢ়ি সফর এবং তাঁর বক্তব্য বিহারের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীতা মন্দির প্রকল্প এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এনডিএ-র প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, আরজেডি এই প্রকল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখছে এবং ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তাদের প্রতিবাদ জোরদার করছে। আগামী নির্বাচনে এই ইস্যুগুলি কীভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে, তা বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।