বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে MiG-21। ভারতের কাছে এরকম ঘাতক বিমান থাকার দরুণ শত্রু দেশগুলি ভারতকে ঘাঁটানোর সাহস দেখায়নি। সেই ১৯৭১ সাল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার শোভা বাড়িয়েছে এই বিমান। কিন্তু এবার সময় এসেছে বিদায় জানানোর এই ‘ফ্লাইং কফিন’-কে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ভারতীয় বায়ুসেনায় যতদিন এই বিমান ছিল ততদিন বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে এটি।
প্রায় ৬০ বছরের ডিউটিতে এই বিমান ৪০০ বার ক্র্যাশ হয়েছে। শুধুতাই নয়, ২০০ জন মতো পাইলটও শহীদ হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালে এই ‘ফ্লাইং কফিন’ MiG-21-কে বিদায় জানানো হবে। দ্য ফ্লাইং কফিন নামে পরিচিত এই যুদ্ধবিমান নিশ্চিতভাবেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এর আরও ইতিহাস শুনলে আপনারও শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা শ্রোত বয়ে যেতে পারে।
৬০ বছরের আকাশপথে দায়িত্ব পালনকালে ২০০ পাইলট ও ৬০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে তারা। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এটি বারবার ভেঙে পড়েছে। শুধু তাই নয়, একে উইডো মেকারও বলা হয়। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে ভারতের কাছে ৮৪০টি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ছিল। কিন্তু অর্ধেকরও বেশি বিমান ভেঙে ধুলোর সঙ্গে মিশে গিয়েছে।
২০২২ সালের ২৮ জুলাই রাজস্থানে একটি মিগ-২১ দুর্ঘটনায় দুই পাইলট নিহত হন। ২০২৩ সালের ৮ মে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যুদ্ধবিমানটি বের করে দিতে হয়। তবে প্রাণে বেঁচে যান পাইলট। কিন্তু মিগ-২১ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই সাধারণ মানুষের। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি মিগ-২১ বিমান ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ২০টি করে যুদ্ধবিমান রয়েছে। বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের সময়ে মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের সাহায্যে ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল। উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান এই বিমান থেকে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দেন। এই বিমানটি ক্রমাগত আপডেট করা হয়েছিল।
মাত্র একজন পাইলট এটি চালাতে পারেন। ৪৮.৩ ফুট লম্বা বিমানটির উচ্চতা সাড়ে ১৩ ফুট। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৭৫ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। সর্বোচ্চ পাল্লা ৬৬০ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৫৭,৪০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। এত উচ্চতায় তা পৌঁছে যায় মাত্র সাড়ে আট মিনিটে। এটিতে একটি 23 মিমি বন্দুক রয়েছে যা প্রতি মিনিটে 200 রাউন্ড গুলি চালাতে সক্ষম। এ ছাড়া পাঁচটি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে, এতে চারটি রকেট বসানো যাবে। একসঙ্গে তিন ধরনের এয়ার টু এয়ার মিসাইল মোতায়েন করা যাবে এই বিমানে। এ ছাড়া ৫০০ কেজির দুটি বোমা বসানো যাবে। বর্তমানে বায়ুসেনা এই মিগের পরিবর্তে তেজস যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।