তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লি জেলায় আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Visit) একটি রোডশো-এ অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে দুই দিনের সফরে তামিলনাড়ুতে আছেন। তাঁর আগমনকে স্বাগত জানাতে রাস্তার দুপাশে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ তাঁর কনভয়কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরম মন্দির পরিদর্শনের জন্য তামিলনাড়ুর আরিয়ালুর জেলায় পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
তাঁর এই দুই দিনের সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী, রাজেন্দ্র চোল প্রথমের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামুদ্রিক অভিযানের ১,০০০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরম মন্দিরের নির্মাণ শুরুর স্মরণে অংশ নেবেন।রাস্তার দুপাশে বিজেপি এবং এআইএডিএমকে-র পতাকা স্থাপন করা হয়েছে, এবং রাজা রাজা চোজানের ছবি এবং প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বার্তা সম্বলিত ফ্লেক্স বোর্ড ও ব্যানার প্রদর্শিত হয়েছে।
একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী মোদী গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরম মন্দিরে আদি তিরুভাথিরাই উৎসব উদযাপনের সময় একটি জনসভায় ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট রাজেন্দ্র চোল প্রথমের সম্মানে একটি স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করবেন।শনিবার, তামিলনাড়ুর থুথুকুডিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী ৪,৮০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন করেন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
এই প্রকল্পগুলি বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি, লজিস্টিক দক্ষতা বাড়ানো, পরিচ্ছন্ন শক্তি পরিকাঠামো শক্তিশালী করা এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কার্গিলের বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং জাতির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি হৃদয়গ্রাহী শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
রাজেন্দ্র চোল প্রথম এবং গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরমরাজেন্দ্র চোল প্রথম (১০১৪-১০৪৪ খ্রিস্টাব্দ) ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দূরদর্শী শাসকদের একজন ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে চোল সাম্রাজ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর বিজয়ী অভিযানের পর তিনি গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরমকে সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে তিনি যে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন, তা ২৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শৈব ভক্তি, স্মারক স্থাপত্য এবং প্রশাসনিক দক্ষতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। আজ, এই মন্দিরটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত, যা তার জটিল ভাস্কর্য, চোল ব্রোঞ্জ এবং প্রাচীন শিলালিপির জন্য বিখ্যাত।
আদি তিরুভাথিরাই উৎসব
আদি তিরুভাথিরাই উৎসব তামিল শৈব ভক্তি ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ উদযাপন। চোল রাজবংশ এই ঐতিহ্যকে প্রবলভাবে সমর্থন করেছিল, যা ৬৩ নয়নমার—তামিল শৈব্যের সাধু-কবিদের দ্বারা অমর হয়ে আছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, রাজেন্দ্র চোলের জন্মনক্ষত্র তিরুভাথিরাই (আর্দ্রা) ২৩ জুলাই থেকে শুরু হয়, যা এই বছরের উৎসবকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের তাৎপর্য
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর শুধুমাত্র তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে উদযাপন করছে না, বরং রাজ্যের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতিকেও তুলে ধরছে। গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরমে রাজেন্দ্র চোল প্রথমের স্মারক মুদ্রা প্রকাশের মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রী ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং চোল সাম্রাজ্যের অবদানকে সম্মান জানাচ্ছেন।
এই উৎসব এবং সফরের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি, রাজ্যের ঐতিহাসিক গৌরবকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা হচ্ছে।থুথুকুডিতে উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলি তামিলনাড়ুর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে পরিবহন, শক্তি এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন, যা রাজ্যের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর তামিলনাড়ুর জনগণের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তামিলনাড়ু সফর শুধুমাত্র রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে উদযাপন করছে না, বরং উন্নয়নের মাধ্যমে তামিলনাড়ুকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করছে।
বিতর্কে ডেবরার সমবায় নির্বাচন: আর্থিক সঙ্কট নাকি চক্রান্ত? বিক্ষোভে বিজেপি
গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরমে রাজেন্দ্র চোল প্রথমের স্মরণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ভারতের গৌরবময় অতীত এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের প্রতীক। এই সফর তামিলনাড়ুর জনগণের মনে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করবে, এবং চোল সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে।