মিজোরামের রাজধানী (Narendra Modi)আইজলকে ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বৈরাবি-সাইরাং রেললাইন এবং সাইরাং রেল স্টেশনের উদ্বোধন করবেন। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা শুক্রবার (২৩ আগস্ট, ২০২৫) আইজলের মিজোরাম পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (এমপিএসএ) ১৫তম সম্মেলনে এই ঘোষণা করেছেন।
৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রড-গেজ রেললাইনটি ২০০৮-০৯ সালে শুরু হওয়া একটি জাতীয় প্রকল্প, যা ভারতীয় রেলের একটি প্রকৌশল বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রকল্পে রয়েছে ৪৮টি সুড়ঙ্গ, ৫৫টি বড় সেতু, ৮৭টি ছোট সেতু এবং দেশের সবচেয়ে উঁচু ১০৪ মিটার উচ্চতার রেল সেতু, যা কুতুব মিনারের চেয়ে ৪২ মিটার উঁচু।
১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম পরিকল্পিত এই রেললাইনটি মিজোরামের জন্য একটি দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এই প্রকল্পটি ঘন জঙ্গল, দুর্গম ভূখণ্ড, দীর্ঘ মৌসুমী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের মতো অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সম্পন্ন হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে (এনএফআর) ২০০৬ সালে প্রাথমিক জরিপ শুরু করে এবং ২০০৮ সালে রাইটসকে প্রাক-নির্মাণ জরিপ ও ভূ-প্রযুক্তিগত তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১১ সালে রাইটস তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তৎকালীন ইউপিএ সরকার ২০০৮-০৯ সালে এটিকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করে, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৯ নভেম্বর, ২০১৪-এ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয় এবং ২০১৫-১৬ সালে নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হয়।
এই রেললাইনটি চারটি ভাগে বিভক্ত: বৈরাবি-হর্তোকি (১৬.৭২ কিমি), হর্তোকি-কাওনপুই (৯.৭১ কিমি), কাওনপুই-মুয়ালখাং (১২.১১ কিমি) এবং মুয়ালখাং-সাইরাং (১২.৮৪ কিমি)। জুন ২০২৫-এ রেল সুরক্ষা কমিশনার (সিআরএস) এই পথের চূড়ান্ত পরিদর্শন সম্পন্ন করেন এবং মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য অনুমোদন দেন।
বৈরাবি-হর্তোকি অংশটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় প্রায় ৫,০২১.৪৫ কোটি টাকা, যদিও কিছু সূত্রে ৮,২১৫ কোটি টাকার উল্লেখ রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা জানিয়েছেন, এই রেল সংযোগ মিজোরামের অর্থনীতি, কৃষি এবং পর্যটন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এটি পরিবহন খরচ কমাবে, যাত্রী ভ্রমণকে সহজ করবে এবং বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। সাইরাং স্টেশনকে বিশ্বমানের সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আইজল থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো দূরপাল্লার ট্রেন চালানোর প্রস্তাবও রয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ভিনোদ কুমার জানিয়েছেন, দীর্ঘ মৌসুমী বৃষ্টি, ভূমিধস এবং শ্রমিকের অভাব এই প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। মিজোরামে স্থানীয় শ্রমিকের অভাবের কারণে অধিকাংশ শ্রমিককে অন্য রাজ্য থেকে আনতে হয়েছিল। এছাড়া, নির্মাণ সামগ্রী যেমন বালি ও পাথরের চিপস আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয় থেকে পরিবহন করতে হয়েছে।
এই রেললাইনটি আইজলকে আসামের শিলচরের মাধ্যমে ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ বৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি মিজোরামকে আসাম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশের পর উত্তর-পূর্বের চতুর্থ রাজ্যের রাজধানী হিসেবে রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে।
Samsung Galaxy M35 5G এখন 3 হাজার সস্তায় কিনুন, মিলবে 8GB RAM ও 6000mAh ব্যাটারি
মিজোরামের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের এই প্রকল্পটি ভারত সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির একটি অংশ, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই উদ্বোধন মিজোরামের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।