ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে রেলের ( Indian Railways) জন্য এক ঐতিহাসিক বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। এই বাজেটে ভারতীয় রেলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২.৫২ লক্ষ কোটি টাকা, যা রেলের আধুনিকীকরণ, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হবে। ভারতের রেল খাতে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বরাদ্দ, যা দেশের রেল পরিষেবাকে আরও দ্রুত, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব করতে সাহায্য করবে।
নতুন ট্রেনের ঘোষণা
এবারের বাজেটে নতুন ট্রেন পরিষেবা সম্প্রসারণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় রেলে নতুন ১৭,৫০০টি সাধারণ কোচ, ২০০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, এবং ১০০টি অমৃত ভারত ট্রেন সংযোজনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস: এই আধুনিক এবং উচ্চগতির ট্রেনগুলোর সংখ্যা বাড়ানোর ফলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে দ্রুতগামী পরিষেবা বাড়বে। ইতোমধ্যে বন্দে ভারত ট্রেনগুলি যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে, এবং নতুন বরাদ্দের ফলে আরও শহর ও রাজ্যে এটি সম্প্রসারিত হবে।
অমৃত ভারত ট্রেন: ভারতীয় রেলের মধ্যম এবং দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা এই ট্রেনগুলো আরও আধুনিক ও আরামদায়ক হবে।
সাধারণ কোচ সংযোজন: সাধারণ শ্রেণির যাত্রীদের সুবিধার্থে ১৭,৫০০টি নতুন কোচ সংযোজনের ঘোষণা করা হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করবে।
নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বরাদ্দ
রেলের নিরাপত্তার উন্নয়নে এবার বাজেটে বড় পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছরের ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এবার ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থ কবচ (KAVACH) অ্যান্টি-কলিশন সিস্টেম, আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা, ব্রিজ ও ট্র্যাকের মানোন্নয়ন এবং স্টেশনগুলির নিরাপত্তা উন্নত করতে ব্যয় করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ক্রমবর্ধমান রেল নেটওয়ার্কে নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় রেল দুর্ঘটনার পর, ভারত সরকার রেল নিরাপত্তার উন্নতিতে বিশেষ নজর দিয়েছে। নতুন বরাদ্দ এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিদ্যুতায়নের দিকে বড় পদক্ষেপ
ভারতীয় রেলকে সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুতায়িত করার লক্ষ্যে এবার বড় ঘোষণা করা হয়েছে। নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, এই অর্থবছরের শেষের মধ্যেই ভারতীয় রেল পুরোপুরি বিদ্যুতায়িত হয়ে যাবে।
ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিশাল, এবং এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম রেল পরিষেবা। সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়িত হয়ে গেলে, রেলের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে এবং ডিজেলের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। এটি ভারতের নেট-জিরো কার্বন এমিশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মালবাহী রেল নেটওয়ার্কের দিকে ভারত
নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় আরও ঘোষণা করেছেন যে আগামী তিন মাসের মধ্যেই ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মালবাহী (কার্গো) রেল পরিষেবা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বর্তমানে, চীনের পরেই ভারত এই ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে।
রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে ভারতের লজিস্টিক খরচ কমবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে। ভারতের অর্থনীতি যখন উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে, তখন রেলের মাধ্যমে মালবাহী পরিষেবা আরও শক্তিশালী হলে উৎপাদন শিল্প, কৃষি এবং অন্যান্য খাতগুলোরও লাভ হবে।
২০২৫-২৬ বাজেটে ভারতের রেলওয়ে খাতের জন্য বিপুল বরাদ্দ এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। নতুন ট্রেন সংযোজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন, সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়ন এবং মালবাহী পরিষেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতীয় রেল আরও আধুনিক ও কার্যকর হয়ে উঠবে। এই বরাদ্দের ফলে একদিকে যেমন যাত্রীসেবা উন্নত হবে, অন্যদিকে শিল্প ও বাণিজ্যেও বড় প্রভাব পড়বে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই উচ্চ বিনিয়োগ ভবিষ্যতে দেশটির পরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাবে এবং ভারতকে একটি শক্তিশালী রেলওয়ে অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।