স্বামীর পরিবার না পিতৃগোত্র? নিঃসন্তান বিধবার সম্পত্তি নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট

Hindu Woman Gotra Change

নয়াদিল্লি: হাজার বছরের ঐতিহ্য, ধর্মীয় আচার এবং আধুনিক উত্তরাধিকার আইনের মধ্যে আবারও এক তীব্র প্রশ্নচিহ্ন টানল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার শীর্ষ আদালতে এক গুরুত্বপূর্ণ শুনানিতে বিচারপতি বিভি নাগারথ্না, যিনি কেবল বেঞ্চের একমাত্র মহিলা বিচারপতিই নন, ভবিষ্যতের প্রধান বিচারপতি হওয়ার দৌড়েও সামিল, স্পষ্টভাবে বলেন, “বিবাহের পর নারীর গোত্রও পরিবর্তিত হয়। হিন্দু বিবাহ-সংস্কারের মূল মন্ত্রেই ঘোষণা করা হয়, এক নারী তাঁর পিতৃগোত্র ছেড়ে স্বামীর গোত্রে প্রবেশ করছেন। বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয় বিবাহ আচার এই সত্যই প্রতিফলিত করে।”

Advertisements

তবে বিচারপতি নাগারথ্না একইসঙ্গে সতর্কও করেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় কোনওভাবেই “সহস্রাব্দ প্রাচীন ঐতিহ্য ভাঙার জন্য নয়।”

মূল আইনি প্রশ্ন

আদালতের সামনে এখন যে প্রশ্নটি কেন্দ্রে উঠে এসেছে তা হল, যদি কোনও হিন্দু নারী বিধবা হন এবং তাঁর সন্তান না থাকে, তবে মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির মালিকানা যাবে কার কাছে? বর্তমান হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬-এর ১৫(১)(খ) ধারা অনুযায়ী, নিঃসন্তান বিধবার সম্পত্তি চলে যায় স্বামীর উত্তরাধিকারীদের হাতে। অর্থাৎ জন্মদাত্রী মা-বাবা বা পিতৃগোত্রের উত্তরাধিকারীরা এই সম্পত্তির অধিকার পান না।

কেন আলোচনায় এই মামলা? Hindu Woman Gotra Change

সম্প্রতি একাধিক ঘটনা এই প্রশ্নটিকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে। কোভিড মহামারির সময় এক তরুণ দম্পতির মৃত্যু হলে তাঁদের সম্পত্তির ওপর মালিকানা নিয়ে দুই পরিবার—স্বামীর মা ও স্ত্রীর মা—মুখোমুখি হন আদালতে।

অন্য এক মামলায়, এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর বোন দাবি জানান তাঁর ভাই ও ভ্রাতৃবধূ (যারা নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান) রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওপর তাঁর অধিকার।

Advertisements

এই সব মামলাই আদালতে এক বড় আইনি ও সামাজিক প্রশ্নকে সামনে এনেছে—নারীর নিজের পিতৃপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক কি বিবাহের পর আইনত ছিন্ন হয়ে যায়?

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ

বিচারপতি নাগারথ্না বলেন, “হিন্দু আইন অনুযায়ী বিবাহিত নারীর দায়িত্ব ও অভিভাবকত্ব স্বামী ও তাঁর পরিবারের ওপর বর্তায়। সেই সূত্রেই উত্তরাধিকারের নিয়মও নির্ধারিত হয়েছে।” তবে একইসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, আধুনিক প্রেক্ষাপটে এই আইন কতটা ন্যায্য, তা নিয়ে নতুন আলোচনা হওয়া দরকার।

বৃহত্তর গুরুত্ব

এই শুনানি নিছক একটি উত্তরাধিকার আইনি ধারা নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে নারীর সম্পত্তির অধিকার, বিবাহ-পরবর্তী পরিচয় এবং সমাজে তাঁর স্থান—যা আগামী দিনে আইন সংস্কারের পথও খুলে দিতে পারে।