নয়াদিল্লি: গুরুনানক জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এ বারও পাকিস্তানে গিয়েছিলেন একদল ভারতীয় তীর্থযাত্রী। অনুমোদিত সরকারি ভিসা হাতে নিয়েও সীমান্তে অস্বস্তিতে পড়লেন তাঁরা। পাক কর্তৃপক্ষের হাতে হেনস্তার শিকার হলেন একদল হিন্দু তীর্থযাত্রী, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগে নয়াদিল্লি।
হিন্দু তীর্থ যাত্রীদের হেনস্থা
পাকিস্তান হাই কমিশন আগেই ঘোষণা করেছিল, গুরুনানকের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রায় ২,১০০ ভারতীয় শিখ তীর্থযাত্রীকে তারা ভিসা দিয়েছে। কিন্তু ওয়াঘা সীমান্তে সেই শিখ দলের সঙ্গেই থাকা কয়েকজন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে হঠাৎই আটকে দেয় পাক সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সম্পূর্ণ নথিপত্র ও ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ভারত সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, “প্রতিটি ভিসা ইস্যু হয় পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা যাচাই ও বহুপাক্ষিক অনুমোদনের মাধ্যমে। যদি আতিথ্যদাতা দেশ সেই যাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে গোটা প্রক্রিয়াটাই অর্থহীন হয়ে যায়।”
ভয় দেখানোর অভিযোগ Hindu Pilgrims Harassed Pakistan
দিল্লির সরকারি সূত্র আরও জানায়, আক্রান্তদের অধিকাংশই সাধারণ তীর্থযাত্রী, রাজনীতি বা কূটনীতির সঙ্গে যাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। “বৈধ কাগজপত্র নিয়েও সীমান্তে তাঁদের জেরা, ভয় দেখানো ও অপমান করা হয়েছে। এটি কেবল ভিসা লঙ্ঘন নয়, মানবিক সৌজন্যের বিরুদ্ধাচরণ,” মন্তব্য সরকারি মহলের।
ভারতের মতে, ঘটনাটি নিছক প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং এটি এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রবণতার প্রতিফলন—যা দুই দেশের মানুষে-মানুষে সংযোগ এবং ধর্মীয় আস্থা বিনিময়ের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। “এই আচরণ আঞ্চলিক বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক কূটনীতির পরিপন্থী। এতে শুধু আস্থা নয়, মানবিক মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে,” মন্তব্য এক কূটনৈতিক সূত্রের।
তীর্থযাত্রীর বক্তব্য
এদিকে, ‘প্রকাশ পুরব’-এর তীর্থযাত্রা উপলক্ষে এ বছরও প্রায় ১,৭৯৬ জন শিখ তীর্থযাত্রী পাকিস্তান গিয়েছেন, গুরুনানক দেবজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক গুরুদোয়ারাগুলিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।
তীর্থযাত্রী হরপ্রীত সিং বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তে আমরা কৃতজ্ঞ। রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই জটিল হোক না কেন, বিশ্বাসের এই সেতু অটুট থাকুক—এই প্রার্থনাই করি। তবে ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ হওয়া দরকার, যাতে বেশি মানুষ এই পবিত্র যাত্রায় অংশ নিতে পারেন।”
গত মাসেই দিল্লির মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, “২০১৯ সালে কার্তারপুর করিডর খোলার মতোই এ বারও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগ শিখ সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতীক। গুরুনানক দেবজির জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে যে এই আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে, তা সত্যিই বিরল।”


