হিন্দি-উর্দুর জন্য খরচ হাজার কোটি, মোদী জমানায় বঞ্চিত বাংলা ভাষা!

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা উন্নয়নের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আবারো বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে সরকারি তহবিল থেকে হিন্দি ও উর্দু ভাষার…

Hindi-Urdu Get Billions, Bengali Language Neglected Under Modi in 2025

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা উন্নয়নের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আবারো বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে সরকারি তহবিল থেকে হিন্দি ও উর্দু ভাষার উন্নয়নে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে বাংলা ভাষা (Bengali Language) এই সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বঞ্চিত রয়েছে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে তীব্র আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছে, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

ভাষা বরাদ্দে বঙ্গের অবহেলা
রাষ্ট্রীয় তথ্য অধিকার (RTI) আবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ভাষার উন্নয়নে ৪২৬ কোটি টাকা এবং উর্দু ভাষার জন্য ৮৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অন্যদিকে, বাংলা ভাষা, যা পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার রাজ্যভাষা হিসেবে কাজ করে এবং প্রায় ৮ কোটি মানুষের মাতৃভাষা, তার জন্য এই সময়ে বরাদ্দ কতটুকু ছিল তা নিয়ে স্পষ্টতা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা ভাষার জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা, যা অন্যান্য ভাষার তুলনায় অত্যন্ত কম।

   

এই বৈষম্যের কারণ হিসেবে বহু মানুষ নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভাষা নীতিকে দায়ী করছেন। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ও উত্তর ভারতীয় ভাষাগুলোর উপর জোর দিয়ে রাজ্যভাষা হিসেবে বাংলার গুরুত্বকে উপেক্ষা করছে। এই নীতির ফলে বাংলা ভাষার সাহিত্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়।

ইতিহাসের পটভূমি: বাংলা ভাষা আন্দোলন
বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও এর সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন নতুন নয়। ১৯৫২ সালে ঢাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের উর্দু-কেন্দ্রিক নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়েছিল। এই আন্দোলনের ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হয়। তবে ভারতের ক্ষেত্রে, যেখানে বাংলা একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভাষা, সেখানে এর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা বাঙালি সমাজে রাগের সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট তহবিল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা সাহিত্য ও গবেষণার কাজে বাধা পড়ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহান সাহিত্যিকদের ভাষার উন্নয়ন না হওয়ায় নতুন প্রজন্ম তাদের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে।

Advertisements

তুলনা: অন্যান্য ভাষার বরাদ্দ
আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, সংস্কৃত ভাষার জন্য গত দশ বছরে ২,৫৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা তামিল, তেলেগু, কন্নড় এবং অন্যান্য দক্ষিণ ভারতীয় ভাষার মোট বরাদ্দের তুলনায় অনেক বেশি। দক্ষিণ ভারতের ভাষা তামিলের জন্য খরচ হয়েছে ১২০ কোটি। তেলুগু এবং কন্নড়ের জন্য ১২ কোটি করে। পশ্চিম ভারতের সিন্ধির জন্য ৫৪ কোটি খরচ করেছে কেন্দ্র। আলোচিত আট ভাষা ছাড়া দেশের বাকি ভাষার জন্য ১৫ কোটিরও কম খরচ হয়েছে গত দশ বছরে।

উর্দুর জন্য এত বড় বরাদ্দের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উত্তর ভারতের একটি প্রভাবশালী ভাষা হওয়ার কারণে এবং সরকারি শিক্ষা প্রণালীতে এর ব্যবহার। তবে বাংলা, যা ১৯৪৭ সালের ভারতীয় সংবিধানে অষ্টম তফসিলে স্থান পেয়েছে, তার জন্য এতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

সমাধানের পথ
বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথমে, কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলা ভাষার জন্য একটি পৃথক তহবিল তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলা সাহিত্য ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। তৃতীয়ত, বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা দরকার।

এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও জাগরণ দেখা দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বাঙালিরা #SaveBengaliLanguage হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে তাদের আক্রোশ প্রকাশ করছেন। এই আন্দোলন কতদূর এগোবে, তা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাংলা ভাষার প্রতি এই উপেক্ষা অব্যাহত থাকলে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।