অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) বুধবার (৩০ এপ্রিল, ২০২৫) দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিক দেশের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।
গোয়ালপাড়ায় একটি পঞ্চায়েত নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি (himanta) বলেন, আগামী কয়েক মাস দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যের মানুষ যেকোনোভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন (himanta)
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন (himanta), “আমরা সবাই জানি, গত সপ্তাহে পাকিস্তানি জঙ্গিরা পহেলগাঁওয়ে কীভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সন্ত্রাসীদের পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে খুঁজে বের করা হবে, এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনবে।” এই ঘোষণা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এসেছে, যা পাহালগামে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পর আরও তীব্র হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট
২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওর কাছে বাইসরান উপত্যকায় একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। হামলাকারীরা, যারা পাকিস্তান-সমর্থিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা পর্যটকদের নাম ও ধর্ম জিজ্ঞাসা করে তাদের লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করেছিল। এই হামলা ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ভারত সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সমর্থকদের “পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে।” তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিক্রিয়ার পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং সময় নির্ধারণে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।
শর্মার বক্তব্য ও অসমের ভূমিকা
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, অসমের মানুষ দেশের প্রতি তাদের আনুগত্যে অটল। তিনি বলেন, “পাকিস্তান যখনই ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেছে, আমাদের সৈনিকরা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে শত্রুদের পরাজিত করেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, অসম শুধুমাত্র সৈন্যদের সমর্থনই করবে না, বরং প্রয়োজনে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শর্মা (himanta) পূর্বে অসমকে একটি প্রতিরক্ষা করিডর হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, “অসমে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা যেতে পারে, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন নেক’-এর নিরাপত্তার জন্য।” এই প্রসঙ্গে তিনি পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-ভিত্তিক শক্তির দ্বারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন।
AFC বাছাইয়ের পূর্বে ‘শক্তিশালী’ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ে মানোলোর ভারত!
পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান ও গ্রেপ্তার
পাহালগাম হামলার পর অসমে পাকিস্তান-সমর্থক মন্তব্যের জন্য ৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা (himanta) স্পষ্ট করে বলেছেন, “ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোনও মিল নেই। এই দুটি দেশ শত্রু রাষ্ট্র, এবং এটাই থাকা উচিত।”
তিনি জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর বিধায়ক আমিনুল ইসলামও রয়েছেন, যিনি হামলাকে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
শর্মা এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “অসম কোনও ব্যক্তিকে সহ্য করবে না, যারা পাহালগামের জঘন্য হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে সমর্থন বা রক্ষা করবে।” তিনি আরও বলেন, “যারা নিরীহ নাগরিকদের নৃশংস হত্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ার, স্বাভাবিক করার বা হালকা করার চেষ্টা করে, তারা ভারতের আত্মার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।”
রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করেছে, যাকে শর্মা ‘ঐতিহাসিক ভুলের সংশোধন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত এই অবিচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।” পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির ভারত-বিরোধী মন্তব্যের সমালোচনা করে শর্মা বলেন, “ভারত সন্ত্রাসকে শিকার করবে এবং যেখানেই থাকুক, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করবে।”
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছে, তবে পাকিস্তান ও চীনের প্রভাবে বিবৃতি কিছুটা দুর্বল হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সাতটি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে এই হামলা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
অসমের জনগণের প্রতিক্রিয়া
শর্মার (himanta) এই বক্তব্য অসমের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের ভাবনাকে উসকে দিয়েছে। গোয়ালপাড়ার সমাবেশে উপস্থিত জনতা তাঁর বক্তব্যে উৎসাহ প্রকাশ করেছে। এক্স-এ অনেকে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করে লিখেছেন, “অসমের মাটিতে পাকিস্তানের সমর্থন সহ্য করা হবে না।” তবে, কিছু বিরোধী নেতা এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই ঘোষণা অসমের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমকে আরও জাগিয়ে তুলেছে এবং পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের কঠোর অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। আগামী মাসগুলি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। অসমের জনগণ, শর্মার নেতৃত্বে, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী বার্তা।