অসমের রাজনীতিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta Rahul) মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত জানুয়ারিতে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার সময় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছিলেন যে লোকসভা নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধীকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, গুয়াহাটিতে যাত্রার সময় কংগ্রেস কর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সহিংসতা ও শান্তিভঙ্গের ঘটনায় উসকানি দিয়েছিলেন।
তবে, নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধী একাধিকবার অসমে এলেও হিমন্তের সেই হুমকি কার্যকর হয়নি। এবার পাল্টা আক্রমণে রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, ২০২৬ সালে অসমে কংগ্রেস সরকার গঠন করলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে পাঠানো হবে। এই বিতর্ক অসমের রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার অসম পর্বে গুয়াহাটিতে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় হিমন্ত রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। অসম পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রাহুল গান্ধী, কে সি ভেণুগোপাল, কানহাইয়া কুমার-সহ অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, অবৈধ সমাবেশ, পুলিশের উপর হামলা এবং সম্পত্তির ক্ষতির অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
হিমন্ত বলেছিলেন, “আমরা একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছি। লোকসভা নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধীকে গ্রেফতার করা হবে, কারণ নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক বলে সমালোচিত হতে পারে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাহুল গান্ধী গুয়াহাটিতে ৩০০০ লোক এবং ২০০ গাড়ি নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে শান্তিভঙ্গের উদ্দেশ্যে উসকানি দিয়েছিলেন।
তবে, লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর রাহুল গান্ধী একাধিকবার অসম সফর করেছেন, এবং হিমন্তের গ্রেফতারির হুমকি কার্যকর হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেস সমর্থকরা এই বিষয়ে হিমন্তকে কটাক্ষ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “হিমন্ত বলেছিলেন রাহুল গান্ধীকে নির্বাচনের পর গ্রেফতার করবেন।
এখন রাহুল অসমে এসেছেন, কিন্তু হিমন্ত কিছুই করতে পারেননি। এটাই জনগণের শক্তি।” এই ঘটনা হিমন্তের হুমকিকে ফাঁপা বলে প্রমাণ করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।এদিকে, ১৬ জুলাই ২০২৫-এ অসমের চায়গাঁওয়ে কংগ্রেসের একটি দলীয় সভায় রাহুল গান্ধী পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে অসমের রাজা মনে করেন।
তিনি সারাক্ষণ আপনাদের সম্পদ এবং জমি আদানি ও আম্বানির হাতে তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। ২০২৬ সালে কংগ্রেস অসমে সরকার গঠন করলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে পাঠানো হবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, হিমন্ত বিজেপি এবং আরএসএস-এর নির্দেশে কাজ করছেন এবং অসমের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চাইছেন।
রাহুলের এই মন্তব্যের জবাবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সামাজিক মাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী সুবিধামত ভুলে যাচ্ছেন যে তিনি নিজেই দেশের বিভিন্ন মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তিনি অসমে এসে শুধু আমাকে জেলে পাঠানোর কথা বলতে এসেছেন।” হিমন্ত আরও দাবি করেন, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা অসমে অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল, এবং তিনি ‘নকশালি কৌশল’ ব্যবহার করেছেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এই ইস্যুতে হিমন্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “অসমের চা বাগান শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না। হিমন্ত এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কংগ্রেস সরকার গঠন করলে হিমন্তকে জেলে পাঠানো হবে।”
অসম কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈও দাবি করেছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি এবং তাদের মিত্রদের পরাজিত করে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, “অসমের মানুষ ভয়, বিদ্বেষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্লান্ত। জমি এখন হিমন্ত, তাঁর স্ত্রী, আদানি ও আম্বানির হাতে চলে গেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাকযুদ্ধ ২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে। বিশ্লেষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাহুল গান্ধী এবং হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে এই সংঘাত কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে আদর্শগত লড়াইয়ের প্রতিফলন।
হিমন্তের গ্রেফতারির হুমকি বাস্তবায়িত না হওয়ায় তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।” সামাজিক মাধ্যমে এই বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রাহুল গান্ধী ঠিকই বলেছেন, হিমন্ত দুর্নীতির প্রতীক। জনগণ তাঁকে জবাব দেবে।”
Sheikh Hasina: শেষ ঘাঁটি রক্ষায় ‘পলাতক’ হাসিনার ভক্তদের আক্রমণ, গোপালগঞ্জে একাধিক নিহত
আরেকজন লিখেছেন, “হিমন্তের হুমকি ফাঁকা। রাহুল গান্ধীকে গ্রেফতার করার সাহস তাঁর নেই।”এই বিতর্ক অসমের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী এবং হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।