অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর কৌশলগত সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইন্দিরা গান্ধী যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি তাঁকে প্রশ্ন করতেন, কেন তিনি শিমলা চুক্তিতে
পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে নেননি এবং কেন ‘চিকেন্স নেক’ করিডোরকে বাংলাদেশ থেকে ১০০ মাইল বাড়িয়ে নেননি। শর্মা আরও জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রশ্ন করার কোনও অধিকার কংগ্রেসের নেই।
শর্মা বলেন (himanta)
শর্মা (himanta) বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী বিজয়ী হয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী যদি আজ বেঁচে থাকতেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম, কেন তিনি একটি ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন? কেন তিনি শিমলা চুক্তিতে পিওকে ফিরিয়ে নেননি? কেন তিনি বাংলাদেশের কাছ থেকে আলোচনার মাধ্যমে চিকেন্স নেক করিডোরকে আরও ১০০ মাইল বাড়াননি?” তিনি দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের সামরিক বিজয়ের পর ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কৌশলগত দূরদর্শিতার অভাবে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হারিয়েছে।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত, পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে শুরু হয়। ভারত, ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে, মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন করে এবং সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত করে।
এই যুদ্ধে ভারত ৯৩,০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দী গ্রহণ করে এবং পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করে বাংলাদেশের জন্ম দেয়। তবে, শর্মার মতে, এই বিজয়ের সুযোগ ভারত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। শিমলা চুক্তি, যা ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টোর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়, যুদ্ধ-পরবর্তী সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
১৯৭১ এ চুক্তির তাতপর্য
এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দেয় এবং ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বরের যুদ্ধবিরতি লাইনকে লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) হিসেবে নামকরণ করে। চুক্তি অনুসারে, ভারত পাকিস্তানের ১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি অঞ্চল ফিরিয়ে দেয় এবং ৯৩,০০০ যুদ্ধবন্দী মুক্তি দেয়। তবে, শর্মা (himanta) দাবি করেছেন, এই উদারতা ভারতের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী ছিল। তিনি বলেন, পিওকে ফিরিয়ে নেওয়ার বা কাশ্মীর সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের কোনও প্রচেষ্টা করা হয়নি।
শর্মা (himanta) আরও উল্লেখ করেছেন, চিকেন্স নেক করিডোর, যা পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে, তা কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাধ্যমে একটি নিরাপদ স্থল করিডোর স্থাপন বা এই করিডোরের প্রসারণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একীকরণে সহায়ক হতে পারত।
এছাড়া, অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য কোনও চুক্তি না হওয়ায় অসম, বাংলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে এবং সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা ভারত উপেক্ষা করেছে।
মেহতাবকে কেন্দ্র করে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের নতুন সংঘাত
কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনা
শর্মার (himanta) এই মন্তব্য কংগ্রেস নেতাদের সমালোচনার প্রেক্ষিতে এসেছে, যারা সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে মোদী সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে “পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক” যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর কংগ্রেস নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের দৃঢ় নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করে মোদীকে কটাক্ষ করেছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এবং কেসি ভেণুগোপাল ইন্দিরার ১৯৭১ সালের মার্কিন চাপ প্রত্যাখ্যানের উদাহরণ তুলে ধরেছেন।
শর্মা (himanta) জবাবে বলেছেন, কংগ্রেসের এই সমালোচনা ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেছেন, ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে সামরিক বিজয় অর্জিত হলেও, রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি নতুন আঞ্চলিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের সামরিক বিজয় ঐতিহাসিক ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে তা একপক্ষীয় উদারতায় পরিণত হয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়নি, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারত।
সামাজিক মাধ্যমে শর্মার (himanta) এই মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘এক্স’-এ অনেকে তাঁর এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ কংগ্রেসের পক্ষ নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ইন্দিরা গান্ধী পিওকে ফিরিয়ে না নেওয়া এবং চিকেন্স নেক করিডোরের সমস্যা সমাধান না করায় একটি বড় সুযোগ হারিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শর্মার এই মন্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এটি ভারতের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং অতীতের সিদ্ধান্তগুলোর বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার উপরও আলোকপাত করে।