অসমের (Assam) মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sharma) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নেতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যদিও অসম ও ত্রিপুরা সরকার এই বিষয়টিতে অত্যন্ত সক্রিয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট দুর্বল। শর্মা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, তবে রাজ্য সরকার এই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই মন্তব্য একদিকে যেমন রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি এটি রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা ও অসম সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে সীমান্তের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে অনুরোধ করেছেন যাতে তারা সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
অসম ও ত্রিপুরা সরকার কিছু সময় ধরে সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশ এবং অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের আটকানো, যাতে তারা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোতে হুমকি সৃষ্টি না করতে পারে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে সীমান্তে কাঁটাতার নির্মাণ, বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ পুরোপুরি নস্যাৎ করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার সবসময়ই সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতে, রাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ও কঠোর নীতি রয়েছে, এবং অনুপ্রবেশ মোকাবিলার জন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এই পরিস্থিতি মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধের একটি অংশ। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্যকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে শাসন করছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং অসমে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
এই বিতর্ক শুধু দুটি রাজ্যের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি আরও বৃহত্তর রাজ্যগত এবং কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রতিফলন। দেশজুড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়, যা বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসম এবং ত্রিপুরা যেমন এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গও অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়ে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে যদি রাজ্যগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় না থাকে, বিশেষত যখন সীমান্তের নিরাপত্তা বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তাই, এই সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ অপরিহার্য হয়ে উঠছে।