কংগ্রেসের প্রতীক হাত নয়! লুঙ্গি করার পরামর্শ মুখ্যন্ত্রীর!

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) গত সোমবার ধেমাজিতে একটি পঞ্চায়েত নির্বাচনী সমাবেশে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে,…

Himanta Biswa Sarma

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) গত সোমবার ধেমাজিতে একটি পঞ্চায়েত নির্বাচনী সমাবেশে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস সরকারের আমলে রাজ্যে উন্নয়নের নামে শুধু ‘লুঙ্গি’, ‘ধুতি’, ‘সুতা’ এবং ‘অথুয়া’ (মশারি) বিতরণ করা হয়েছে। এই মন্তব্যের সঙ্গে তিনি আরও বিতর্কিতভাবে বলেছেন যে, কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক ‘হাত’ থেকে পরিবর্তন করে ‘লুঙ্গি’ করা উচিত।

ধেমাজির নির্বাচনী সমাবেশে শর্মা দাবি করেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গত চার বছরে অসমে শান্তি ও অগ্রগতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের আমলে উন্নয়ন বলতে শুধু লুঙ্গি, ধুতি, সুতা আর মশারি বিতরণই ছিল। তারা শুধু এই ভাষাই বুঝত।” তিনি আরও যোগ করেন যে, বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে এবং ‘অরুণোদয়’র মতো প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যা নারীদের ক্ষমতায়ন করছে।

   

শর্মা তাঁর বক্তব্যে ‘লুঙ্গি’ প্রতীকের কথা উল্লেখ করলেও এর পিছনের কারণ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেননি। তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তাঁর নেতৃত্বে অসমে শান্তি ও উন্নয়নের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। তিনি দাবি করেন, রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়ছে, যুবকরা মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাচ্ছে এবং কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এই মাসে বিদ্যুৎর দাম এক টাকা কমানোর পর নভেম্বরে আরও এক টাকা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, এলপিজি সিলিন্ডার কেনার ক্ষেত্রে ২০০-৩০০ টাকার ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনাধীন রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদের কথা উল্লেখ করে শর্মা বলেন, “আমি প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি এবং এখনও শিখছি। এই মেয়াদ শুধুই একটি ভূমিকা, আগামী সরকারে পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত হবে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অসমকে দেশের শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একটি করে তুলব।”
পরে দিনে ডিগবয়ে আরেকটি পঞ্চায়েত নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে শর্মা জনগণকে বিজেপি-এজিপি জোটের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতেও আমাদের জোট ক্ষমতায় এলে অসমে শুধু ডাবল-ইঞ্জিন নয়, ট্রিপল-ইঞ্জিন সরকার হবে, যা রাজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।” তিনি আরও দাবি করেন, প্রায় সব বড় জঙ্গি গোষ্ঠী শান্তি আলোচনার জন্য এগিয়ে এসেছে, কোনো আন্দোলন হচ্ছে না এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে। এসবই রাজ্যের উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত বলে তিনি মনে করেন।

অসমে পঞ্চায়েত নির্বাচন দুই ধাপে ২ মে এবং ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে, যা রাজ্যের ৩৪টি জেলার মধ্যে ২৭টিতে হবে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় থাকা সাতটি জেলায়, যেখানে স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের নির্বাচন হয়, সেখানে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। ভোট গণনা হবে ১১ মে।

শর্মার এই ‘লুঙ্গি’ মন্তব্য তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ভূপেন কুমার বরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, শর্মার এই মন্তব্য অসম্মানজনক এবং বিভাজনকারী। তিনি বলেন, “যে চেয়ারে তিনি আজ বসে আছেন, সেটি একসময় ভারতরত্ন গোপীনাথ বরদলৈ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কি কখনও এমন কথা বলতেন?” বরা আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, শর্মা নিজে কংগ্রেসের টিকিটে জালুকবাড়ি থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা কংগ্রেসেই হয়েছিল।

Advertisements

শর্মার মন্তব্যের জবাবে ভূপেন কুমার বরা পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “বিজেপি ও আরএসএসের রাজনীতি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যাকারী নাথুরাম গডসের বন্দুক দিয়ে শুরু হয়েছিল। শর্মার উচিত তাঁর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুলের পরিবর্তে গডসের বন্দুক করা।” এই পাল্টাপাল্টি মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

শর্মার সমর্থকরা এই মন্তব্যকে কংগ্রেসের দুর্বল শাসনের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ হিসেবে দেখলেও, সমালোচকরা এটিকে সাম্প্রদায়িক এবং অসংবেদনশীল বলে অভিহিত করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্য ভাইরাল হয়েছে এবং অনেকে এটিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা মন্তব্য হিসেবে দেখছেন।

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অসমে পরিচয়, ঐতিহ্য এবং উন্নয়নের বিষয়গুলি নির্বাচনী প্রচারে প্রধান থিম হয়ে উঠেছে। শর্মার এই মন্তব্য এবং কংগ্রেসের পাল্টা আক্রমণ রাজ্যের রাজনৈতিক লড়াইকে আরও তীব্র করেছে। সাধারণ নাগরিকরা যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়ে মনোযোগ দিতে চাইছেন, তখন এই ধরনের রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।