‘জমিয়তকে আমার বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি’! উচ্ছেদে প্রতিক্রিয়া হিমন্তর

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ (এ)-এর প্রধান মৌলানা আরশাদ মাদানির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মাদানি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে তিনি…

Himanta Biswa Sarma

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ (এ)-এর প্রধান মৌলানা আরশাদ মাদানির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মাদানি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে তিনি কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে নির্বাচনী টিকিট না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যখন শর্মা কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

মাদানির অভিযোগ, শর্মার মধ্যে ‘আরএসএস মানসিকতা’ রয়েছে, এবং তিনি তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। এই মন্তব্যের জবাবে শর্মা শনিবার গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মাদানির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন, এবং তাঁর অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

   

শর্মা বলেন, “২০১১ সালে, যখন আমি অসমের শিক্ষামন্ত্রী হই, তখন মাদানি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে টিইটি (শিক্ষক যোগ্যতা পরীক্ষা) শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তা বন্ধ করিনি, বরং নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। তখন থেকেই মাদানি আমার বিরুদ্ধে গিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “কংগ্রেসে মাদানির মতো লোকেরা অসমকে দুর্বল করার জন্য কাজ করে। তারা কত টিকিট বিতরণ করেছে, তা কেউ জানে না। কিন্তু আজ মাদানির কথা কেউ শোনে না।” শর্মার এই মন্তব্য মাদানির রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে, এবং তিনি দাবি করেন যে মাদানি এখন ‘হিরো থেকে জিরো’ হয়ে গেছেন।

এই বিতর্কে অসম কংগ্রেসও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ সংবাদ মাধ্যমকে কে বলেন, “হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন তিনি বদরুদ্দিন আজমল এবং মাদানির মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতেন।

মাদানির অসমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। কংগ্রেস হাইকমান্ড কখনোই মাদানির প্রভাবে টিকিট দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।” বরদলৈয়ের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে কংগ্রেস দল মাদানির অভিযোগ থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করছে।

শর্মা আরও দাবি করেছেন যে ২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনের আগে মাদানির মতো ব্যক্তিরা অসমের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, “মাদানি হিরো থেকে জিরো হয়ে গেছেন। তিনি সবসময় বিজেপির বিরোধিতা করবেন। হর্ষ মান্ডার বা শাহিন বাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের মতো অনেকেই বিজেপির বিরোধিতা করবে।

তারা আমার ক্ষতি করতে পারবে না, তবে অসমের জন্য অনুচিত কাজে লিপ্ত হতে পারে। আমাদের মাদানির পেছনের উৎসগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, এবং আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে কাজ চালিয়ে যাব।”

এই বিতর্কের পেছনে অসমে চলমান অবৈধ অভিবাসন এবং জমি দখল নিয়ে চলা উচ্ছেদ অভিযান রয়েছে। শর্মার সরকার ২০২১ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের, বিশেষ করে বাংলা-ভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের (মিয়া) বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে।

Advertisements

মাদানি এই অভিযানকে ‘মুসলিম-বিরোধী’ এবং ‘ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত’ বলে সমালোচনা করেছেন, দাবি করে যে এর ফলে ৫০,০০০-এরও বেশি মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়েছে। তিনি সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে শর্মার ‘আরএসএস মানসিকতা’ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন এবং তাঁকে টিকিট না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বিজেপি এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। বিজেপি মুখপাত্র অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “কংগ্রেসের টিকিট কি মৌলানারা ঠিক করে, নাকি কংগ্রেস নির্বাচন কমিটি? মনে হচ্ছে কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নয়, বরং ইসলামপন্থী কংগ্রেস।” শর্মা নিজেও বলেন, “আরশাদ মাদানি বা মাহমুদ মাদানি, আমি তাদের কথায় কান দিই না। অসমের জনগণই ঠিক করবে কে তাদের মুখ্যমন্ত্রী হবে, জমিয়ত নয়।”

জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ অসমে উচ্ছেদ অভিযানকে ‘অমানবিক’ এবং ‘ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত’ বলে সমালোচনা করেছে এবং শর্মার অপসারণ ও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার মামলার দাবি জানিয়েছে। তবে, শর্মা এই দাবিগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমি জমিয়তকে আমার বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি।

এই আঙুলে অসমের রক্ত, শক্তি এবং সাহস রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি আমি মাদানিকে পাই, তবে তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেব।”

এই বিতর্ক ২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শর্মা তাঁর সরকারের উচ্ছেদ অভিযানকে আদিবাসী অসমীয়াদের জমির অধিকার রক্ষার অংশ বলে দাবি করেছেন।

তফসিলি জাতি-উপজাতির ক্ষমতায়নে ‘ভুবনেশ্বর এজেন্ডা’-র ঘোষণা সংসদে

তিনি বলেন, “আমরা বাসুন্ধরা প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসীদের জমির অধিকার দিচ্ছি, কিন্তু বহিরাগতদের এক ইঞ্চি জমিও দেওয়া হবে না।” এই ঘটনা অসমের রাজনীতিতে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভাজনের ইস্যুকে আরও প্রকট করেছে।