অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) ঘোষণা করেছেন যে ভারত সরকার অসমের মোরানে একটি অত্যাধুনিক জরুরি অবতরণ সুবিধা (ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি বা ইএলএফ) নির্মাণ করতে চলেছে। এই রানওয়েতে রাফাল এবং সুখোই-৩০ এমকেআই-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমানও অবতরণ করতে পারবে।
শর্মা বলেন, (Himanta) “আমরা বিশ্বাস করি যে এই সুবিধা আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরোপুরি সক্রিয় করা যাবে। আমি নিজে এই জরুরি অবতরণ সুবিধা পরিদর্শন করেছি এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছি।” এই উদ্যোগ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মোরানে (Himanta) নির্মিত এই জরুরি অবতরণ সুবিধা ভারতীয় বিমান বাহিনীর কৌশলগত ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই রানওয়ে জাতীয় সড়কের একটি অংশে নির্মিত হয়েছে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে সামরিক এবং বেসামরিক বিমানের অবতরণের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মোরানের এই সুবিধা অসমের ডিব্রুগড় জেলায় অবস্থিত, যা ভৌগোলিকভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি কৌশলগত স্থান।
চীন এবং মায়ানমারের সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চল সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রানওয়ে রাফাল, সুখোই-৩০ এমকেআই, এবং অন্যান্য ভারী যুদ্ধবিমানের অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য উপযুক্তভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
এই সুবিধা জরুরি পরিস্থিতিতে, যেমন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য সংকটকালীন অবস্থায় বিমান বাহিনীর দ্রুত মোতায়েনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া, এটি বেসামরিক বিমানের জন্যও জরুরি অবতরণের সুবিধা প্রদান করবে। ভারত সরকারের এই উদ্যোগ জাতীয় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা কৌশলের সমন্বয়ের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) জানিয়েছেন যে এই প্রকল্প ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং জাতীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি গত সপ্তাহে মোরানে এই সুবিধা পরিদর্শন করেন এবং প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। বৈঠকে বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শর্মা বলেন, (Himanta) “এই প্রকল্পটি অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় হবে। আমরা নিশ্চিত করছি যে রানওয়ের গুণমান এবং নিরাপত্তা মান আন্তর্জাতিক স্তরের হয়।” এই রানওয়ে জাতীয় সড়ক ৩৭-এর একটি ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে নির্মিত হয়েছে।
এটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত, যাতে রাত্রিকালীন অবতরণ এবং কঠিন আবহাওয়াতেও বিমান পরিচালনা সম্ভব হয়। এছাড়া, রানওয়ের পাশে জরুরি সেবা, জ্বালানি সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারত ভৌগোলিক এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল চীন, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে অবস্থিত, যা এটিকে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল করে তোলে।
মোরানে (Himanta) এই জরুরি অবতরণ সুবিধা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেবে। এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা (Himanta) বলেন, “এই প্রকল্প কেবল প্রতিরক্ষার জন্য নয়, অসমের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের পরিকাঠামোর গুণমান এবং কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার একটি উদাহরণ।” তিনি আরও জানান, এই সুবিধা অসমের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
মোরানের (Himanta) স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা, প্রণব গগৈ, বলেন, “এই রানওয়ে আমাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। এটি আমাদের গর্বের বিষয় যে মোরানে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তৈরি হচ্ছে।” তবে, কিছু বাসিন্দা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে নির্মাণ কাজের সময় স্থানীয় যানবাহন চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য কাজ করছে।
১ অগস্ট থেকে UPI-এর ৫টি বড় পরিবর্তন, জানুন কী কী নতুন নিয়ম
ভারত সরকার গত কয়েক বছরে জাতীয় সড়কগুলিতে একাধিক জরুরি অবতরণ সুবিধা নির্মাণ করেছে। উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরে ইতিমধ্যে এই ধরনের সুবিধা রয়েছে। ২০২১ সালে উত্তর প্রদেশের বারাবাঙ্কিতে প্রথম জরুরি অবতরণ সুবিধা উদ্বোধন করা হয়, যেখানে সুখোই এবং মিরাজ-২০০০ বিমান সফলভাবে অবতরণ করেছিল। মোরানের এই নতুন সুবিধা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
মোরানে জরুরি অবতরণ সুবিধা নির্মাণ অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর কৌশলগত ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রাখবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta) নেতৃত্বে এই প্রকল্প অক্টোবরের মধ্যে সক্রিয় হলে, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে।