ধুবড়ি পরিদর্শনে জেলা প্রশাসনের হয়ে ভুল স্বীকার হিমন্তর

  অসমের ধুবড়ি জেলায় গরুর মাংস বিতর্ক নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি সম্প্রদায়ে কিছু ভুল…

Himanta at dhubri

 

অসমের ধুবড়ি জেলায় গরুর মাংস বিতর্ক নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি সম্প্রদায়ে কিছু ভুল মানুষ থাকে… এবং ভুল মানুষ ভুল কাজ করে। তার পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়… যদি জেলা প্রশাসন ঈদের আগে মানুষকে জানিয়ে দিত যে গরুর মাংস মন্দিরের কাছে ফেলা যাবে না, তাহলে এই ঘটনা এড়ানো যেত।”

   

এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘শুট-অ্যাট-সাইট’ আদেশ এবং ১৫০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার। ধুবড়ির ঘটনা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং এটি এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ধুবড়ির ঘটনা

ধুবড়ি জেলা, যা বাংলাদেশ (Himanta)  সীমান্তের কাছে অবস্থিত, সম্প্রতি একটি স্পর্শকাতর ঘটনার কারণে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত ৭ জুন, ঈদ-উল-আজহার পরদিন, ধুবড়ির একটি হনুমান মন্দিরের সামনে একটি গরুর মাথা পাওয়া যায়।

এই ঘটনা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদের সূত্রপাত করে। পরের দিন, একই স্থানে আরেকটি গরুর মাথা পাওয়া যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে। এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসন ২০২৩ সালের ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) ১৩ জুন ধুবড়ি সফরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী মন্দিরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে সক্রিয় হয়েছে। আমরা শুট-অ্যাট-সাইট আদেশ জারি করেছি।” এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শর্মার বক্তব্য

ধুবড়ির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি সম্প্রদায়ে কিছু ভুল মানুষ থাকে। তারা ভুল কাজ করে এবং তার ফল সবাইকে ভোগ করতে হয়। ঈদের সময় কিছু অসামাজিক ব্যক্তি ধুবড়ির হনুমান মন্দিরে গরুর মাংস ফেলে ঘৃণ্য কাজ করেছে।” তিনি জেলা প্রশাসনের ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেন, বলেন, “ঈদের আগে যদি প্রশাসন স্পষ্ট নির্দেশ দিত যে মন্দিরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গরুর মাংস বিক্রি বা খাওয়া নিষিদ্ধ, তাহলে এই ঘটনা এড়ানো যেত।”

শর্মা (Himanta)  আরও অভিযোগ করেন যে ধুবড়িতে ‘নবীন বাংলা’ নামে একটি বাংলাদেশ-সমর্থিত সংগঠন পোস্টার লাগিয়ে জেলাটিকে বাংলাদেশের অংশ করার দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন, “এই পোস্টারগুলি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ-সমর্থিত একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি ধুবড়িতে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।” তিনি জেলায় স্থায়ী সেনা ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাবনাও উল্লেখ করেন।

আইনি পদক্ষেপ

অসম গবাদি পশু সংরক্ষণ আইন, ২০২১ অনুযায়ী, হিন্দু, জৈন ও শিখ-অধ্যুষিত এলাকায় এবং মন্দির বা সত্রের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গরু জবাই ও গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ। শর্মা এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধুবড়িতে মন্দিরের কাছে গরুর মাংস বিক্রি বা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দোকানিরা স্বেচ্ছায় দোকান বন্ধ করুক, নইলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে।”

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে ঈদের আগে ১,৪৬০টি গবাদি পশু পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে ধুবড়িতে আনা হয়েছিল, যার জন্য পশুপালন বিভাগের অবৈধ অনুমতিকে দায়ী করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisements

রাজনৈতিক বিতর্ক

ধুবড়ির ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ অভিযোগ করেছেন যে এই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তিও জড়িত থাকতে পারে। জবাবে শর্মা (Himanta)  বলেন, “কংগ্রেসের এই সংকীর্ণ মানসিকতা হিন্দু সমাজের অপমান। কোনো হিন্দু মন্দিরে গরুর মাংস ফেলতে পারে, এটা বিশ্বাস করা অযৌক্তিক।” তিনি গগৈকে প্রমাণ সহ অভিযোগ করার চ্যালেঞ্জ জানান।

শর্মা কংগ্রেসের ‘তোষণ নীতি’র সমালোচনা করে বলেন, “যারা এই ঘটনার জন্য হিন্দুদের দায়ী করছে, তাদের প্রমাণ দিতে হবে। এই ধরনের অভিযোগ শুধু একটি সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করে।” তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, তবে তিনি স্পষ্ট করেন যে এই কাজ কয়েকজন অসামাজিক ব্যক্তির, পুরো সম্প্রদায়ের নয়।

ধুবড়ির ঘটনা লক্ষীমপুর ও গোয়ালপাড়া জেলাতেও অনুরূপ ঘটনার সূত্রপাত করেছে। লক্ষীমপুরে একটি নামঘরের কাছে তিনটি গরুর মাথা পাওয়া গেছে, যার জন্য সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়ালপাড়ায় মন্দিরের কাছে গরুর মাংস ফেলার অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে গোলবন্যার পর অখুশি ছেত্রী! দিলেন কঠিন বার্তা

সরকারি পদক্ষেপ

শর্মা (Himanta) ধুবড়িতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েন করেছেন। তিনি দোকান মালিকদের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধুবড়িকে হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। একবার এটা ঘটলে, রাজ্যে এটি একটি প্রবণতা হয়ে উঠবে।”

তিনি অবৈধ গবাদি পশু পাচারের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, যা পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধুবড়িতে হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তিনি বলেন, “এই নেটওয়ার্কের পেছনে কারা রয়েছে, তা খুঁজে বের করা হবে।”

ধুবড়ির গরুর মাংস বিতর্ক অসমের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা তুলে ধরেছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta)  কঠোর পদক্ষেপ এবং বক্তব্য এই ঘটনাকে শান্ত করার চেষ্টা হলেও, এটি সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতা ও অবৈধ অভিবাসনের প্রশ্ন তুলেছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকার, প্রশাসন এবং সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।