হিমাচলে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধস! ২৮৫টি রাস্তা বন্ধ, আইএমডি-র কমলা সতর্কতা

হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) অবিরাম ভারী বৃষ্টি এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে রাজ্যের ২৮৫টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী…

Himachal Pradesh Weather Crisis: 285 Roads Blocked by Landslides, IMD Issues Orange Alert

হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) অবিরাম ভারী বৃষ্টি এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে রাজ্যের ২৮৫টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী জগৎ সিং নেগি সোমবার একটি বিশেষ পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। তিনি সড়ক অবরোধ, বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহের ব্যাঘাত পর্যালোচনা করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) কাংড়া, মান্ডি, সিরমৌর এবং শিমলা জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা হিমাচল প্রদেশের বর্তমান আবহাওয়া সংকট এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

Read Hindi: हिमाचल प्रदेश में भारी बारिश और भूस्खलन: 285 सड़कें बंद, आईएमडी ने जारी किया ऑरेंज अलर्ट

   

**ভূমিধস ও রাস্তা অবরোধ
মন্ত্রী জগৎ সিং নেগি জানিয়েছেন যে, গত রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যে ২৮৫টি রাস্তা ভূমিধস এবং মাটি সরে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে কমপক্ষে ২৩৪টি রাস্তা পুনরায় চালু করা।” তবে, তিনি স্পষ্ট করেছেন যে সমস্ত জাতীয় মহাসড়ক এখনও কার্যকর রয়েছে। তবে, ৯৬৮টি বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। সিরমৌর (৫৭টি রাস্তা) এবং মান্ডি (৪৪টি রাস্তা) জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শিমলা-কালকা জাতীয় মহাসড়কে (এনএইচ-৫) কোটির কাছে একটি ভূমিধসের কারণে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাফিক জ্যাম হয়েছে। শিমলা-কালকা রেললাইনও ভারী বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও সকাল ৯টার মধ্যে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে রেল পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়েছে।

**আইএমডি-র পূর্বাভাস ও সতর্কতা
আইএমডি-র শিমলা কেন্দ্রের সিনিয়র বিজ্ঞানী সন্দীপ কুমার শর্মা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় হিমাচল প্রদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে, মান্ডি, কাংড়া, বিলাসপুর, সোলান, শিমলা, হামিরপুর এবং চাম্বা জেলার কিছু বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে মান্ডির পান্ডোহতে (১৩০ মিমি), তারপরে মান্ডি শহরে (১২০ মিমি), শিমলার সান্নিতে (১১৩ মিমি) এবং পালমপুরে (৮০ মিমি)। শর্মা আরও জানান, জুন মাসে রাজ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে, কিন্নৌর এবং লাহৌল-স্পিতির উচ্চ-উচ্চতার জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের তুলনায় যথাক্রমে ২০ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।

আইএমডি কাংড়া, মান্ডি, সিরমৌর এবং শিমলা জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, বিলাসপুর, হামিরপুর, কুল্লু, চাম্বা, সোলান এবং উনা জেলায় মাঝারি থেকে উচ্চ ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ঝুঁকি রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জুলাই ৫ পর্যন্ত রাজ্যে ভেজা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এবং বাসিন্দা ও পর্যটকদের নদী, স্রোত এবং ভূমিধস-প্রবণ এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

Advertisements

**প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু কাংড়া, মান্ডি, সিরমৌর এবং সোলান জেলার ডেপুটি কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন সোমবার (৩০ জুন) সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়। মান্ডি জেলার ডেপুটি কমিশনার অপূর্ব দেবগন আইআইটি মান্ডি, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ এবং অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছেন। শিমলার ভাট্টাকুফার এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়েছে, তবে পূর্ব সতর্কতার কারণে ভবনটি আগেই খালি করা হয়েছিল। রামপুরের সারপাড়া পঞ্চায়েতে ক্লাউডবার্স্টের কারণে কিছু বাড়ি এবং গোয়ালঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

**প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি
গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি-সম্পর্কিত ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে উনা এবং বিলাসপুরে দুজন ডুবে মারা গেছেন এবং শিমলায় একজন উচ্চতা থেকে পড়ে মারা গেছেন। ২০ জুন থেকে মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিয়াস নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে মান্ডি জেলার পান্ডোহ বাঁধের ফ্লাডগেট খোলা হয়েছে। রাজ্যে মোট ৭৫.৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হিমাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের কারণে জনজীবন ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। আইএমডি-র কমলা সতর্কতা এবং প্রশাসনের তৎপরতা সত্ত্বেও, পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। বাসিন্দা এবং পর্যটকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়েছে।