হিমাচল প্রদেশে ভয়াবহ বৃষ্টিপাত (Himachal Pradesh Landslide) পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। বুধবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে আবহাওয়া দপ্তর রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সুনদরনগর এবং কুল্লু জেলায় ভয়াবহ ভূমিধসের ফলে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আরও দু’জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় চলছে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ।
মঙ্গলবার রাতে সুনদরনগরের বিএবিএমবি কলোনিতে একটি ভয়াবহ ভূমিধস ঘটে। এই ঘটনায় কয়েকটি বাড়ি ধসে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা রাতভর তল্লাশি চালিয়ে বুধবার সকালে আরও চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক মা ও তাঁর ছেলে—সুরিন্দর কউর এবং গুরপ্রীত সিং। তাঁদের দেহগুলি বাড়ির ভেতরেই মাটি চাপা পড়ে ছিল, বাড়ির ছাদ কেটে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় প্রকাশ শর্মা নামের এক ব্যক্তির দেহ তাঁর স্কুটার-সহ উদ্ধার হয়। প্রশাসনের অনুমান, স্কুটার আরোহীর সঙ্গে অন্য কেউ ছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া একটি টাটা সুমোর যাত্রীর দেহও উদ্ধার হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি মহিলার দেহ এবং এক শিশুর দেহ উদ্ধার হয়। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনদরনগর ভূমিধসে মৃতদের মধ্যে একই পরিবারের চারজন রয়েছেন। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে এবং আরও কেউ ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কুল্লুর আখাড়া বাজার এলাকাতেও মঙ্গলবার রাতে প্রবল ভূমিধসের ফলে দুটি বাড়ি ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলে রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক দল মোতায়েন করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে একজন এনডিআরএফ জওয়ান নরিন্দর সিং (৩৭) এবং কাশ্মীরের ওয়াকার আহমেদ (২৪) আটকে রয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। তল্লাশি অভিযান চালানো হলেও অতিবৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ১০০ মিমি’র বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় একের পর এক ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের তরফে স্থানীয়দের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে অযথা যাতায়াত না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিপর্যস্ত এলাকায় এনডিআরএফ এবং সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এখনও যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন তাঁদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে হিমাচলে ভূমিধস ও বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের তরফে আপৎকালীন নম্বর চালু করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।