হিমাচলপ্রদেশ: প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের জেরে রাজ্যজুড়ে ২৬০টিরও বেশি রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে শুধু মান্ডি জেলাতেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৭৬টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
শনিবার হিমাচল প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্যের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর ইতিমধ্যেই রবিবারের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। কাংরা, সিরমৌর ও মান্ডি জেলার কিছু এলাকায় ‘অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত’-এর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
একাধিক জেলায় ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা
এর পাশাপাশি, উনা, বিলাসপুর, হামিরপুর, চম্বা, সোলান, শিমলা ও কুল্লু জেলার জন্য জারি করা হয়েছে ‘অরেঞ্জ’ সতর্কতা, যেখানে ‘ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত’ ঘটতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ১১৫.৬ মিমি থেকে ২০৪.৪ মিমি বৃষ্টিকে ‘অতি ভারী’, আর ২০৪.৪ মিমির বেশি বৃষ্টিকে ‘অত্যন্ত ভারী’ বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়।
বিপদের আশঙ্কা: ধস, ফ্ল্যাশ ফ্লাড ও জলবন্দিত্ব Himachal Pradesh heavy rainfall
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃষ্টির ফলে ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা (ফ্ল্যাশ ফ্লাড) এবং নিম্নাঞ্চলে জল জমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর ফলে রাস্তা, সেতু, পানীয় জলের প্রকল্প, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে নদীনালা ও ধসপ্রবণ অঞ্চল থেকে দূরে থাকতে।
ক্ষতির অঙ্ক বাড়ছেই
হিমাচল প্রদেশের State Emergency Operation Centre (SEOC) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে ৫৪১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু জানিয়েছেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি যা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে, কারণ অনেক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও প্রস্তুত হয়নি।
এছাড়াও, রাজ্যজুড়ে প্রায় ৩০০টি ট্রান্সফর্মার ও ২৮১টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বহু গ্রামে বিদ্যুৎ ও জলের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের চিত্র
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে গিয়েছে। জোগিন্দরনগরে ৫২ মিমি, নাহান ও পালমপুরে ২৮.৮ মিমি করে, পাঁওতা সাহিবে ২১ মিমি, উনায় ১৮ মিমি, বেরথিনে ১৭.৪ মিমি, কাংরায় ১৫.৬ মিমি এবং নৈনা দেবীতে ১২.৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে
মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ২০ জুন থেকে এখন পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে মোট ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি প্রাণহানির ঘটনা সরাসরি বৃষ্টিপ্রবণ বিপর্যয়ের সঙ্গে যুক্ত — যেমন ক্লাউডবার্স্ট, ধস ও আকস্মিক বন্যা।
বিশেষ করে মান্ডি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু মঙ্গলবারেই সেখানে ১০টি ক্লাউডবার্স্ট ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। এছাড়া ৩১ জন নিখোঁজ, যাদের খোঁজে এখনও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল।
সামনে আরও দুর্যোগের পূর্বাভাস
আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার, সোমবার ও মঙ্গলবারেও হিমাচল প্রদেশের একাধিক জেলায় ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ বলবৎ থাকবে। এর অর্থ, রাজ্যে আগামী কয়েকদিন আরও প্রবল বৃষ্টি, সম্ভাব্য ধস ও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।