হিমাচল প্রদেশে বর্ষার (Himachal Monsoon Havoc) তাণ্ডব পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০২৫ সালের ২০ জুন থেকে চলা টানা বর্ষণে রাজ্যজুড়ে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৭ জনে। এর মধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু সরাসরি বর্ষাজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা, ক্লাউডবার্স্ট, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হয়েছে।
অপরদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। হিমাচল প্রদেশের স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (SDMA)-র প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে রাজ্যের ৫৫৭টি সড়ক, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক (NH-03, NH-05 এবং NH-305), সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে।
কিন্নৌর জেলার নাথপা, নিগুলসারি, পাগল নালা সহ কুল্লু ও লাহৌল-স্পিতির একাধিক অংশে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার জেরে জাতীয় সড়কগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পাহাড়ি জেলার মধ্যে যানবাহন চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। কুল্লুতে ১৬০টি, মান্ডিতে ২১৩টি এবং কাংড়ায় ৬০টি সড়ক এখনও বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে ৯৩৬টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় সবচেয়ে গুরুতর বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে—এখানে ৬৫১টি ট্রান্সফর্মার অকেজো হয়ে পড়েছে। কুল্লুতে ১৮৯টি এবং সিরমৌরে ৪০টি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে।
পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। মান্ডিতে ৭২টি, শিমলায় ৫২টি এবং কুল্লুতে ৩৫টি জল সরবরাহ প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই মৌসুমে জনসাধারণ ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹২,৭৭,৪০১ লক্ষ টাকা (₹২,৭৭৪ কোটি টাকা)। মান্ডি, কাংড়া এবং কুল্লু জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মান্ডিতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিজনিত প্রাণহানি ঘটেছে (২৯ জন), এরপর রয়েছে কাংড়া (৩০ জন), চম্বা (১৪ জন), কিন্নৌর (১৪ জন) এবং শিমলা (১৩ জন)। সড়ক দুর্ঘটনায় চম্বায় ২২ জন, মান্ডিতে ২২ জন, কাংড়ায় ১৯ জন, কিন্নৌরে ১৪ জন এবং শিমলায় ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, টানা বৃষ্টিপাত এবং দুর্গম পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি কাজকে জটিল করে তুলছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে রাস্তা পরিষ্কার, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করেছে যে আগামী দিনগুলিতে আরও ভারী বৃষ্টিপাত হলে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে। পর্যটকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে আপাতত হিমাচলের পাহাড়ি জেলাগুলি ভ্রমণ না করতে। তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুধুমাত্র পাহাড়ি রাজ্যের অবকাঠামো নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকেও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে, পাশাপাশি উদ্ধারকাজে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পরবর্তী কয়েকদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।