জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir’s Heavy Rain) ডোডা জেলার অন্তর্গত পাহাড়ি অঞ্চল ভদ্রবাহে গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণের ফলে শুক্রবার একটি বিশাল ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিধসের কারণে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু রাস্তা, ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। প্রশাসন ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভদ্রবাহ অঞ্চলে এই ধরণের বড়ো ভূমিধস সচরাচর দেখা না গেলেও, চলতি বছরের অতি বৃষ্টিপাত(Jammu and Kashmir’s Heavy Rain) পরিস্থিতিকে অনেকটাই জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটি অত্যধিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ায় পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। গত ৭২ ঘণ্টায় ওই এলাকায় প্রায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ভূমিধসের কারণে অন্তত দুটি গ্রামে বড়ো আকারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একাধিক বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা চলছে।
ভূমিধসের(Jammu and Kashmir’s Heavy Rain) কারণে বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভদ্রবাহর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশ, সেনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) একযোগে কাজ করছে। রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন তারা বহু বছর পর হলেন। অনেকেই জানিয়েছেন, মধ্যরাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় এবং পরে তারা দেখতে পান পাহাড় থেকে মাটি ও পাথর গড়িয়ে আসছে। অনেক পরিবার দ্রুত ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং প্রাণে রক্ষা পান।
এদিকে আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েকদিন জম্মু ও কাশ্মীরের(Jammu and Kashmir’s Heavy Rain) বিভিন্ন অঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকাগুলিতে নতুন করে ভূমিধসের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে প্রয়োজনে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায়, রাজ্য সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। এ ছাড়া যাদের বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণের কথাও ভাবা হচ্ছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবারও দেখিয়ে দিল পাহাড়ি অঞ্চলে অব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় কেটে নির্মাণ, বৃক্ষচ্ছেদন এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভূমিকম্প এবং ভূমিধসের ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে।