হরিয়ানার তথাকথিত “ভোট চুরি” বিতর্কে এবার জুড়ল এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক বৈঠকে প্রদর্শিত এক মহিলার ছবিকে ঘিরে রীতিমতো আন্তর্জাতিক কৌতূহল তৈরি হয়েছে — কারণ সেই ছবির নারী ভারতীয় নন, তিনি ব্রাজিলের এক মডেল!
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল অভিযোগ করেন, বিজেপি হরিয়ানায় বৃহৎ মাত্রায় ভোট কারচুপি করেছে। তাঁর দাবি, একই নারীর ছবি ব্যবহার করে একাধিক ভোটার কার্ড তৈরি হয়েছে। রাহুল বলেন, “এই মহিলা কে? তিনি হরিয়ানায় ২২ বার ভোট দিয়েছেন, ১০টি বুথে তাঁর আলাদা আলাদা নাম। বিজেপি ভুয়ো ভোটে জিতেছে।”
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সত্যি প্রকাশ্যে আসে। তথ্য-যাচাইকারী সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবের দেখান, সেই ছবি কোনও ভারতীয় নারীর নয়, বরং ব্রাজিলিয়ান মডেল ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার লারিসা-র বহু পুরনো এক ফটো।
“বিশ্বাসই করতে পারছি না!” প্রতিক্রিয়া লারিসার
বিতর্কের জেরে লারিসা নিজেই ভিডিও পোস্ট করে বলেন, “হায় ঈশ্বর! আমার পুরনো একটা ছবি ভারতে রাজনৈতিক লড়াইয়ের অস্ত্র হয়ে গিয়েছে! আমি তখন ১৮ বা ২০ বছরের ছিলাম। আমার ছবিকে ভারতীয় বলে ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করছে! এ কেমন পাগলামি!”
তাঁর প্রতিক্রিয়া মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ ঠাট্টা করেন, কেউ আবার প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে একটি বিদেশি মডেলের ছবি ভারতের ভোটার তালিকায় এসে পড়ল?
‘ছবি ভুল, কিন্তু আমি নিজেই ভোট দিয়েছি’, দাবি প্রকৃত ভোটারের Haryana Voter Fraud Controversy
এদিকে সিএনএন-নিউজ১৮-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই ভোটার আইডির প্রকৃত মালিক পিঙ্কি জুগিন্দর কৌশিক জানান, “আমি নিজেই ভোট দিয়েছি। ছবিটা ভুল ছিল, অন্য কারওটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ আমাকে চাপ দেয়নি, আমি নিজের স্লিপ দেখিয়ে ভোট দিয়েছি।” তিনি স্পষ্ট জানান, বিষয়টি কেরানির ভুলের ফল, এতে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।
রাহুলের অভিযোগ, কমিশনের পাল্টা, ও বাস্তব চিত্র
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, হরিয়ানায় “ভোট চুরি” হয়েছে এবং বিজেপি ভুয়ো ভোট ও পোস্টাল ব্যালট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাঁর মতে, গণতন্ত্রকে পদ্ধতিগতভাবে বিকৃত করা হচ্ছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটের দিন কংগ্রেসের নিজস্ব পোলিং এজেন্টরাই এই অসঙ্গতি নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেননি।
অন্যদিকে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর এক অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট জানাচ্ছে, রাহুলের দেওয়া অনেক উদাহরণই প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে মেলে না। যেমন, হোদাল অঞ্চলের একটি বাড়িতে ৬৬ জন ভোটার থাকার দাবি করা হয়েছিল। তদন্তে জানা যায়, সেটি এক বৃহৎ পারিবারিক জমি — যেখানে চার প্রজন্মের বহু সদস্য আলাদা ঘরে থাকেন। তাই একই ঠিকানায় বহু ভোটার থাকা আইনসম্মত।
রাজনীতির কেন্দ্রে ‘ভোট চুরি’র বয়ান
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে “তথ্যবিহীন প্রচার” চালানোর অভিযোগ তোলে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, যাচাই না করেই রাহুল ভারতের গণতন্ত্রকে আন্তর্জাতিক মহলে হাস্যাস্পদ করে তুলেছেন।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের দাবি, রাহুলের বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, কেবল একটি ছবির প্রসঙ্গ নয়, বরং সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ।
কিন্তু ব্রাজিলিয়ান মডেলের সেই ছবিকে ঘিরে যে অস্বস্তিকর আন্তর্জাতিক আলোচনার জন্ম হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে এক অভিনব ও বিব্রতকর মোড় এনে দিয়েছে।


