হরিদ্বার: উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির নির্দেশে বুধবার ভোরে ভেঙে ফেলা হল একটি বেআইনি মাজার। সেচ দফতরের প্রায় দুই বিঘা সরকারি জমির উপর নির্মিত ওই মাজারটি দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের নজরে ছিল। একাধিকবার সতর্কতা ও উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে অভিযান চালিয়ে প্রশাসন পুরো কাঠামোটি গুঁড়িয়ে দেয়।
বুধবার সকালে বিশাল পুলিশ বাহিনী উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি জমিতে অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ আইনত অপরাধ, ধর্ম নির্বিশেষে। পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয়, সেজন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা আগেই এলাকা ঘিরে ফেলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অভিযান সম্পন্ন হয়।
সুবর্ণরেখা তীরে সূর্যদেবকে নৌকা উৎসর্গ, রাসযাত্রায় অনন্য প্রথা ঝাড়গ্রামে
অভিযানের পর মুখ্যমন্ত্রী ধামি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কেউ চাদর বিছিয়ে বা ধর্মের আড়ালে সরকারি জমি দখল করতে পারবে না। জমি জিহাদ, লাভ জিহাদ, স্পিট জিহাদ এই তিনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
রাজ্যের আইন সবার জন্য সমান, ধর্মের নামে দখলদারি চলবে না।” ধামির এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। তিনি আরও বলেন, “হরিদ্বার দেবভূমি, এখানে অবৈধ দখল বা বেআইনি নির্মাণের কোনো স্থান নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে রাজ্য প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।”
অভিযান চলাকালীন প্রায় ২০০-রও বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল, যাতে কোনো অশান্তি না ছড়ায়। উচ্ছেদের পর জমি সেচ দফতরের দখলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই জমি ভবিষ্যতে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হবে। জেলার পুলিশ সুপার জানান, “অভিযান সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। কোনো ধরনের প্রতিরোধ বা গোলযোগ ঘটেনি। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।”
অন্যদিকে, বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা” বলে কটাক্ষ করেছে। কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, “ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ব্যবহার করে বিজেপি রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি চালাতে চাইছে।
বেআইনি দখল রুখতে পদক্ষেপ জরুরি, কিন্তু তা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই সমানভাবে হওয়া উচিত।” তবে বিজেপির পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে যে এই অভিযানের সঙ্গে রাজনীতি বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী ধামি শুধু বেআইনি দখল রুখতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি গত এক বছরে একাধিকবার রাজ্যজুড়ে বেআইনি মাজার, মন্দির ও নির্মাণের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১,০০০-র বেশি বেআইনি ধর্মীয় স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলির বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “বছরের পর বছর সরকারি জমি বেআইনি ভাবে দখল ছিল। অবশেষে সরকার সাহস দেখিয়েছে।”


