হাপুর, উত্তরপ্রদেশ: হাসপাতালে জরুরি বিভাগ মানেই রোগীদের চাপ, উৎকণ্ঠা, জীবন বাঁচানোর লড়াই। সেই জায়গায় দায়িত্ব পালনের সময় এক নারী মেডিক্যাল ইন্টার্নের উপর ঘটে গেল ভয়াবহ হেনস্তার ঘটনা। অভিযোগের তীর এক যুবকের দিকে, নাম ফারহান। ঘটনাটি ঘটেছে হাপুর জেলার একটি সরকারি হাসপাতালে, যা এখন পুরো রাজ্যে আলোড়ন তুলেছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, মণিপুর থেকে চিকিৎসাশিক্ষার জন্য হাপুরে আসা ওই নারী ইন্টার্ন জরুরি বিভাগে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন। সেসময় ফারহান নামের এক যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাসপাতালে ঢুকে কথোপকথনের অজুহাতে তার কাছে এগিয়ে আসে। প্রথমে বিনয়ী কথা বলার চেষ্টা, পরে মোবাইল নম্বর চাওয়ার দাবি ঘটনাটি সেখানেই থেমে যায়নি।
SIR প্রসঙ্গে মমতাকে সতর্কবাণী কংগ্রেস নেত্রীর
ইন্টার্ন জানান, “আমি নম্বর দিতে অস্বীকার করলে সে হঠাৎ রেগে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল শুরু করে। আমাকে হাত ধরার চেষ্টা করে। আমি সাহায্যের জন্য ডাকলে সে আরও ভয় দেখিয়ে বলে চিৎকার করলে আমাকে মেরে ফেলবে।” সুরক্ষার খাতিরে কাজের জায়গাতেই সুরক্ষা থাকে কমপক্ষে এমনটাই প্রত্যাশা। কিন্তু সে রাতে পরিস্থিতি এমনভাবে খারাপ হয়ে দাঁড়ায় যে প্রাণের ভয় অনুভব করেন তিনি। অভিযোগ, সহকর্মীরা এগিয়ে আসতেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায় হাসপাতাল চত্বর থেকে।
কিন্তু এখানেই ঘটনা মোড় নেয়। নিকটবর্তী এলাকার স্থানীয় মানুষ ও ইন্টার্নের পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্তকে হাসপাতালের বাইরে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করে ধরে। এরপর উত্তেজিত জনতা তাকে জুতো–চটি দিয়ে মারধর করে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাপুর থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে। অভিযোগের ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে মহিলা হেনস্তা, অশ্লীল আচরণ, শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে শারীরিক স্পর্শের চেষ্টা, প্রাণনাশের হুমকি।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও লিখিত বিবৃতি দিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, “অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল। যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ করে নিরপেক্ষ তদন্ত চলবে।”
ঘটনার পর হাসপাতালের ইন্টার্ন এবং চিকিৎসক সমাজের মধ্যে ভয় ও ক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসার মতো মহৎ পেশায় থাকা মানুষদের সুরক্ষার প্রশ্ন সামনে এসেছে ফের। নার্স, ইন্টার্ন ও জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য “হাসপাতালে কর্মরতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠবে। রাতে মহিলাকর্মীদের শিফট আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।” মণিপুর থেকে আসা ইন্টার্নের সহপাঠীরা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। তাকে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, জনতার মারধর নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলেও স্থানীয়রা দাবি করেছেন “আমরা আইন হাতে নিইনি, বরং অপরাধীকে ধরার জন্যই আটকেছিলাম। তারপর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।” নারী সুরক্ষার প্রশ্ন দেশে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মত সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী ও নজরদারি বাড়ানো জরুরি। অভিযোগকারী চিকিৎসাকর্মীর পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
