জ্ঞানেশ কুমারকে ভারতের মুখ্য-নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ

ভারতের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (Chief Election Commissioner) হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আগের সিইসি রাজীব কুমারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এই নিয়োগের পর, তার…

Gyanesh Kumar Appointed as New Chief Election Commissioner of India"

ভারতের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (Chief Election Commissioner) হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আগের সিইসি রাজীব কুমারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এই নিয়োগের পর, তার প্রথম কাজ হবে ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা, সেই সঙ্গে আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং তামিলনাড়ুতে নির্বাচন পরিচালনা করাও।

গত বছর মার্চে, কুমার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮৮ ব্যাচের আইএএস অফিসার, কেরালা কেডারের, এবং রাজীব কুমারের অবসরগ্রহণের পর তিন সদস্যের প্যানেলে সিনিয়র কমিশনার ছিলেন। এই প্যানেলের অন্য কমিশনার হলেন সুকবীর সিং সান্ধু, যিনি উত্তরাখণ্ড কেডারের অফিসার।

   

নতুন সিইসি নিয়োগ নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি
নতুন সিইসি নিয়োগ নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কংগ্রেসের দাবি, নতুন সিইসি নিয়োগের প্রক্রিয়া তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে এবং এটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে সিইসি নির্বাচন সম্পর্কিত ২০২৩ সালের আইন চ্যালেঞ্জের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এই আইনটি বর্তমান বিজেপি সরকারকে সিইসি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ প্রদান করছে। এই আইনে, প্রধানমন্ত্রী, একজন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিরোধী দলের নেতা নিয়ে গঠিত একটি তিন সদস্যের প্যানেল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জ্ঞানেশ কুমারের সম্পর্কে
জ্ঞানেশ কুমার ৬১ বছর বয়সী, এবং তিনি আগে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের প্রবন্ধ ৩৭০ বাতিল করার বিলের খসড়া প্রস্তুত করার জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৯ সালের আগস্টে, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাদেশিক অধিকার বাতিলের পর, এই রাজ্যটি দুটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়। তখন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে জম্মু-কাশ্মীর ডিভিশনের যুগ্ম সচিব ছিলেন।

এর এক বছর পর, কুমার অযোধ্যার রাম মন্দির সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পরিচালনা করেছিলেন, যা তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তিনি সেই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে ছিলেন।

সূত্র থেকে জানা গেছে, কুমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রতি নিকট সম্পর্ক রয়েছে। কুমার গত বছর জানুয়ারিতে সিভিল সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহণ করেন, যখন তিনি সহযোগিতা মন্ত্রনালয়ের সচিব ছিলেন, যা অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে ছিল।

জ্ঞানেশ কুমারের শিক্ষা ও পেশাগত জীবন
জ্ঞানেশ কুমারের শিক্ষা জীবন বেশ বৈচিত্র্যময়। তিনি কানপুরের ভারতীয় প্রকৌশল ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএটেক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া, তিনি চার্টার্ড ফাইনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া থেকে ব্যবসায়িক অর্থনীতি শিখেছেন। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশগত অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

পেশাগত জীবনে কুমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ফলে তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

নতুন সিইসি হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন সিইসি হিসেবে, জ্ঞানেশ কুমারের প্রধান কাজ হবে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা এবং সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এছাড়া, ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনসহ অন্যান্য রাজ্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কুমার বলেছেন, তিনি নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যের সঙ্গে একযোগভাবে কাজ করবেন যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জাতীয় এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার জন্য কাজ করবেন এবং নির্বাচন কমিশনের কাজের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন করবেন।

অবশেষে, নির্বাচনী আইন সম্পর্কিত পর্যালোচনা
কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও, জ্ঞানেশ কুমারের নিয়োগ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের আগে সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন সম্পর্কিত আইনকে চ্যালেঞ্জ জানানো হলেও, এই আইন কার্যকর থাকলে কেন্দ্রের সরকারকেই সিইসি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের অধিকারের সুযোগ দেবে, যা বিরোধী দলের অভিযোগ অনুযায়ী একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও বিরোধী দলের আপত্তি রয়েছে, তবে নতুন সিইসি হিসেবে জ্ঞানেশ কুমার তার অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।