ত্রিশুর: কেরলের ধর্মীয় স্থানগুলোতে সম্পদের লুটপাটের অভিযোগ এখন আরও গভীরতর রূপ নিচ্ছে। সবরিমালা মন্দিরে সোনার চুরির ঘটনায় কলকলি চলতে না চলতেই, গুরুবায়ুর বিখ্যাত শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অডিট রিপোর্টে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোনা, রুপা, হাতি দাঁত এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যের অভাবের পাশাপাশি মন্দিরের ১২,০০০ একরেরও বেশি জমির কোনও অস্তিস্ব নেই।
এই অনিয়মগুলো কতদিন ধরে চলছে, এবং কোথায় গেল এই বিপুল সম্পদ এই প্রশ্ন এখন কেরলের রাজনীতি এবং সমাজকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। অডিট রিপোর্টগুলোতে বলা হয়েছে, মন্দিরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অবহেলা এবং দুর্বল রেকর্ড রাখার কারণে এই সম্পদগুলো অপব্যবহারের শিকার হয়েছে, যা কেরলের মন্দির ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কারের দাবি তুলে ধরেছে।
জাতীয় দলের ডাক, তবুও বাংলার নেতৃত্ব তারকা ক্রিকেটার
গুরুবায়ুর শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, যা লক্ষ লক্ষ ভক্তের আকর্ষণের কেন্দ্র এবং কেরলের সবচেয়ে ধনী মন্দিরগুলোর একটি, এখন এক অভূতপূর্ব কেলেঙ্কারীর মুখোমুখি। রাজ্য অডিট বিভাগের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অডিট রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, মন্দিরের পুন্নথুর কোট্টা হাতি অভয়ারণ্যে হাতি দাঁত এবং আইভরি প্রক্রিয়াকরণের সময় ৫২২.৮৬ কিলোগ্রাম আইভরি পাওয়া গেছে।
কিন্তু সেগুলোর কোনো হিসাব নেই। বন বিভাগের নির্দেশ সত্ত্বেও এই আইভরি বা তথ্য তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি, যা আইনের লঙ্ঘন। এছাড়া, মন্দিরের ভান্ডারে সোনা এবং রুপার বস্তুগুলোর যাচাই চার দশকেরও বেশি সময় ধরে করা হয়নি, যদিও ১৯৭৮ সালের গুরুবায়ুর দেবস্বম আইন এবং ১৯৮০ সালের নিয়মে এটি বার্ষিক বাধ্যতামূলক।
ফলে, প্রায় ৪৭৫ গ্রাম সোনা এবং ৫৩০ কিলোগ্রামেরও বেশি আইভরির অভাব দেখা দিয়েছে। ভক্তদের দ্বারা প্রদত্ত মূল্যবান উপহার যেমন কাশ্মীরি কেশর (প্রতি কেজি ১.৪৭ লক্ষ টাকা মূল্যের) মাত্র একটি ব্যক্তিগত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ হয়, যা অডিটের বাইরে থেকে যায়। এমনকি মন্জাদিকুরু (লাল ভাগ্যবান বীজ) এবং অন্যান্য অফারিংসেরও হিসাব নেই।
এই অডিটের ফলাফল সবরিমালার সোনা চুরির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বৃহত্তর চিত্র তুলে ধরেছে। সবরিমালায় দ্বারপালক মূর্তির সোনার প্লেটিং অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় কেরল হাইকোর্ট একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) গঠন করেছে এবং বলেছে যে এটি ‘একাকী ঘটনা নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট ষড়যন্ত্র’।
গুরুবায়ুর ক্ষেত্রেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে মূর্তির মেরামতের জন্য স্পনসরকে বাইরে পাঠানো হয়েছে, এবং ২০২৫ সালেও একই স্পনসরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আগের অনিয়ম গোপন করার চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, মন্দিরের আয়-ব্যয়ের হিসাবে ২৫ কোটি টাকার অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে, এবং মন্দিরের ১২,০০০ একরেরও বেশি জমির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরটিআই অনুসারে, গুরুবায়ুর দেবস্বমের ব্যাঙ্কে ১,৭৩৭ কোটি টাকার জমা এবং ২৭১ একর জমি রয়েছে, কিন্তু অডিটে অনেক জমি ‘অনুসরণযোগ্য নয়’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এই জমিগুলো কোথায় গেল, কে লুট করল এই প্রশ্ন ভক্তদের মনে জাগিয়েছে আতঙ্ক।