গুয়াহাটি, ২৯ সেপ্টেম্বর: অসমের সাংস্কৃতিক আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, গায়ক-সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) অকালমৃত্যুতে রাজ্যবাসী এখনও শোকাহত। রাজনীতিবিদ থেকে শিল্পপতি। ফিল্ম থেকে সংগীত সব মহলেই শোকের ছায়া। জুবিনের শেষকৃত্যের দুদিন পরেই তার বাসভবনে পৌছগলেন আদানি গ্ৰুপের কর্ণধার গৌতম আদানি।
আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি তাঁর পুত্র জিত আদানি সঙ্গে গুয়াহাটির কাহিলিপাড়ায় জুবিনের বাসভবনে পৌঁছে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই সফরটি শুধু একটি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং আসামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি জাতীয় পর্যায়ের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সম্মান প্রকাশ।
রবিবার সন্ধ্যায়, প্রায় রাত ৮:৪৫ মিনিটের দিকে গৌতম আদানি লোকপ্রিয় গোপীনাথ বর্দলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র জিত আদানি এবং আদানি গ্রুপের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তারা সোজা গিয়ে জুবিনের কাহিলিপাড়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন। সেখানে জুবিনের স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গার্গের সঙ্গে প্রায় অর্ধঘণ্টা কথা বলেন।
ফুলের মালা অর্পণ করে শোকসভায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি গৌতম আদানি গরিমার সঙ্গে বসে জুবিনের স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, “গৌতম আদানি এবং তাঁর পুত্র জিত আসামের এই আইকনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তারা গরিমার সঙ্গে বসে গায়কের অকালমৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।” তবে দেশের সব মহলের কাছে জুবিনের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও গৌতম আদানির এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে আপ্লুত জুবিনের পরিবার।
জুবিন গার্গের মৃত্যুর ঘটনা এখনও রাজ্যের মানুষের মনে এক অজানা বেদনা জাগিয়ে তুলেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য গিয়ে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে ৫২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। সিঙ্গাপুরের চিকিতৎসকরা মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডুবে যাওয়া (ড্রাউনিং) উল্লেখ করলেও অসমে ফিরে আসা মৃতদেহের দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম করা হয়েছে।
জনগণের সন্দেহ এবং শিল্পী সম্প্রদায়ের দাবির কারণে অসম সরকার একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) গঠন করেছে। সিআইডির বিশেষ ডিজি এম.পি. গুপ্তার নেতৃত্বে এই তদন্ত চলছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জনসমর্থনকে গুরুত্ব দিয়ে স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জুবিন গার্গ ছিলেন শুধু একজন গায়ক নন, তিনি ছিলেন অসমের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। অসমীয়া, বাংলা, হিন্দি সহ ৪০টিরও বেশি ভাষায় গান গেয়ে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। বলিউডের হিট গান ‘য়া আলি’ থেকে শুরু করে অসমীয়া ফোক-পপ-রকের মিশ্রণে তাঁর সৃষ্টি ‘মায়াবিনী’—প্রতিটি গানই আজও মানুষের মনে বাজে। তিনি ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, কবি, অভিনেতা, পরিচালক এবং দাতা।
হাজতে বাবা, তবুও আতঙ্কে ছাত্রীরা! বলছেন, “লড়াই এখনও বাকি”!
২০১৯-এর নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তিনি অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক অবস্থানও নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর অসমে তিন দিন রাজ্যশোক ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২২ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে রাজকীয় সমাধিসঙ্গে ক্রীমেশন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মন কি বাত’-এ তাঁকে স্মরণ করে বলেছেন, “জুবিনের সঙ্গীত ভবিষ্যত প্রজন্মকেও মুগ্ধ করবে।”