দীপাবলির আগে দেশবাসীর জন্য বড় সুখবর দিল মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উৎসবের মরশুমে সাধারণ মানুষের জন্য থাকবে বিশেষ উপহার। সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখা গেল জিএসটি (GST) কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে। ২২ সেপ্টেম্বর, নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই কার্যকর হচ্ছে নতুন জিএসটি কাঠামো, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত বহু পণ্যের দাম কমবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছেন, মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক সুরাহার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নতুন জিএসটি কাঠামোয় ১৭৫টি পণ্যের উপর কর কমানো হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মধ্যে রুটি, দুধ, পনির, এবং ৩৩টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধে জিএসটি সম্পূর্ণ মকুব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমা এবং জীবন বিমাতেও কোনও কর আরোপ করা হবে না, যা মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক পরিকল্পনায় স্বস্তি এনে দেবে। এছাড়াও তেল, ঘি, মাখন, নুডলস, চানাচুর, বিস্কুট, পাস্তা, সস, চিজ ইত্যাদি পণ্যের উপর জিএসটি ১৮ এবং ১২ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নামানো হয়েছে।
শুধু খাদ্যপণ্য নয়, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বহু প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সাবান, শ্যাম্পু, ব্রাশ, শেভিং ক্রিম, বাসনপত্র, সেলাই মেশিন, ট্র্যাক্টর, কীটনাশক, কৃষি-উপকরণ ইত্যাদিতেও করের হার কমেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের খরচের চাপ কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পণ্যের উপর জিএসটি হ্রাস পাওয়ায় সবজি ও অন্যান্য ফসলের দামও কিছুটা কমতে পারে বলে অনুমান।
চিকিৎসাক্ষেত্রেও বড় সুরাহা মিলছে। থার্মোমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, টেস্ট কিট, গ্লুকোমিটার, মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন, চশমা প্রভৃতি চিকিৎসা-সংক্রান্ত জিনিসপত্রে করের হার নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ শতাংশে। এছাড়াও হ্যান্ডিক্রাফটস, মার্বেল, চর্মজাত পণ্যেও জিএসটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে।
বাড়ির এসি, টিভি, মনিটর, ওয়াশিং মেশিন, তিন চাকার গাড়ি, ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি, ৩৫০ সিসির কম বাইক, বাস ও ট্রাকের জিএসটি ১৮ শতাংশে নামানো হয়েছে। পড়ুয়াদের জন্য সুখবর—ম্যাপ, খাতা, পেনসিল, রবারের মতো শিক্ষা-সংক্রান্ত জিনিসে জিএসটি সম্পূর্ণ মকুব করা হয়েছে।
তবে সব পণ্যের দাম যে কমবে তা নয়। বিলাসবহুল সামগ্রী যেমন কোল্ড ড্রিঙ্কস, গুটখা, পানমশলা, সিগারেট, বড় দামী গাড়ি, ৩৫০ সিসি-র বেশি বাইক, ব্যক্তিগত ব্যবহারের হেলিকপ্টার, ইয়ট ও প্লেনে ৪০ শতাংশ জিএসটি বসানো হচ্ছে। এর ফলে এইসব পণ্যের দাম বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটির এই বড়সড় সংস্কার উৎসবের মরশুমে সাধারণ মানুষের কেনাকাটার ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। করের বোঝা কমায় সাধারণ মানুষ যেমন স্বস্তি পাবেন, তেমনই খাদ্যপণ্য, কৃষি সরঞ্জাম, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজার আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
নতুন জিএসটি কাঠামো কার্যকর হওয়ার ফলে দেশজুড়ে বাজারে এক ধাপ ইতিবাচক সাড়া তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।