নয়াদিল্লি: দেশের সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি আনতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্র। আজ থেকে শুরু হল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের নেতৃত্বে দুই দিনের গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (GST) কাউন্সিল বৈঠক। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কর কাঠামোর সরলীকরণ ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে কর কমানো। সূত্র অনুযায়ী, বর্তমান চারটি করের স্তর বাদ দিয়ে দুটি স্ল্যাব চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে।
বর্তমানে জিএসটি কাঠামোয় রয়েছে ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮% হারে কর। নতুন প্রস্তাবে এই চারটি স্ল্যাব কমিয়ে আনা হবে মাত্র দুটি স্তরে – ৫% ও ১৮%। ২৮% হারে করযুক্ত প্রায় ৯০% পণ্য সরিয়ে আনা হবে ১৮% স্ল্যাবে। একইভাবে ১২% স্ল্যাবের বেশ কিছু পণ্য আনা হবে ৫% হারে করের আওতায়। এর ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও এর ফলে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তবে সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
বৈঠকে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার প্রিমিয়ামকে জিএসটি থেকে পুরোপুরি ছাড় দেওয়ার। বর্তমানে এই খাতে ১৮% হারে কর নেওয়া হয়। অন্যদিকে তামাকজাত দ্রব্য, বিলাসবহুল গাড়ি এবং মদকে ‘সিন প্রোডাক্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে ৪০% হারে বিশেষ কর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেস ও গ্রিন এনার্জি সেস চালুর বিষয়েও আলোচনা চলছে, যা বর্তমানে কার্যকর থাকা ক্ষতিপূরণ সেসের বিকল্প হিসেবে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্কবৃদ্ধির প্রভাবও কিছুটা সামাল দিতে সাহায্য করবে। আমেরিকায় পাঠানো প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় পণ্যে এই নতুন কর কাঠামোর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৭.৮% হওয়ায় এই কর সংস্কার অর্থনীতিতে বাড়তি জোয়ার আনতে পারে। সম্প্রতি স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, জিএসটি সংস্কার এবং আয়কর হ্রাস মিলিয়ে বাজারে প্রায় ৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচের সম্ভাবনা রয়েছে, যা জিডিপির প্রায় ১.৬%।
তবে বিরোধী শাসিত কয়েকটি রাজ্য এই প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই কাঠামোগত পরিবর্তনে রাজস্ব আয় কমবে, যা রাজ্যগুলিকে সমস্যায় ফেলবে। তামিলনাডু, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গসহ আটটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে নিজেদের প্রস্তাব পেশ করবেন। রাজ্যগুলির দাবি, রাজস্ব ক্ষতি পূরণে বিলাসবহুল ও সিন পণ্যে অতিরিক্ত কর ধার্য করে রাজস্ব ভাগাভাগির একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
কেন্দ্র জানিয়েছে, এই জিএসটি সংস্কার তিনটি মূল স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে – কাঠামোগত সংস্কার, করের হার সরলীকরণ এবং ‘Ease of Living’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের সঙ্গেই এই পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আগামী দিনে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে কেন্দ্রের দাবি।