শ্রীনগর ৩ অক্টোবর: গতকালই বিষাদের বিজয়া দশমীতে শেষ হয়েছে বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসব (Durga Puja 2025)। দেশে তো বটেই বিদেশেও বিভিন্ন জায়গায় মানুষ মেতে উঠেছিলেন মাতৃবন্দনায়। ঠিক তেমনই পুজোর ছোঁয়া লেগেছিল কাশ্মীরের শ্রীনগরে। সেখানকার বাঙালিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আনন্দে মাতলেন স্থানীয়রাও।
কাশ্মীরের হৃদয়স্থল লাল চৌকের রাস্তায় ঢাকের ঢাক, ঘুঙুরের ঝংকার এবং ‘জয় মা দুর্গা’-র জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বাঙালি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মহাদশমীর দিনে দুর্গাপূজার বিসর্জন মিছিল বের করেছেন, যা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক অপূর্ব দৃশ্য। শিব মন্দির থেকে শুরু হয়ে লাল চৌক পর্যন্ত পৌঁছানো এই মিছিলে শত শত বাঙালি, স্থানীয় কাশ্মীরিরা এবং এমনকি বিদেশী পর্যটকরাও অংশ নিয়েছেন। এটি কাশ্মীরের রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এই জায়গায় দশক পর দশক পর সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
গতকাল, ২ অক্টোবর মহাদশমীর দিন, শ্রীনগরের বাঙালি সম্প্রদায়ের সদস্যরা শিব মন্দির থেকে দেবী দুর্গার মূর্তি নিয়ে রথযাত্রা শুরু করেন। লাল চৌকের প্রধান চৌরাস্তায় পৌঁছে মিছিলটি আরও বর্ধিত হয়। মহিলারা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার আয়োজন করেন, যেখানে লাল সিঁদুর মেখে একে অপরের কপালে তিলক দেন।
এই দৃশ্যে কাশ্মীরি মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরাও যোগ দিয়ে হাত মেলান, যা ‘একতার বাংলা, একতার কাশ্মীর’-এর বার্তা দেয়। এক বিদেশী পর্যটকের মুখে রং লাগানোর দৃশ্যও ভাইরাল হয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কাশ্মীরের ভাইচারা’ হ্যাশট্যাগে ছড়িয়ে পড়েছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী মহিলারা নাচতে নাচতে গান গেয়েছেন, যা পুরো এলাকাকে উৎসবমুখর করে তুলেছে।
শ্রীনগরে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ৫০০-এর মতো, যারা বেশিরভাগ আইটি, ব্যবসা এবং শিক্ষা খাতে যুক্ত। দশকের পর এই মিছিল লাল চৌক দিয়ে পার হওয়া একটি বিরল ঘটনা। ২০১৯ সালের পর কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসার পর এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ না থামালে মানচিত্র থেকে মুছে যাবে পাকিস্তান: সেনাপ্রধান
গত বছর রামনবমীতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মিছিলে মুসলিম সম্প্রদায়ের যোগদানের মতোই, এবার দুর্গাপূজায়ও একই ছবি। লাল চৌক, যা একসময় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, আজ উৎসবের আঙ্গিনা হয়ে উঠেছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের টাইট সিকিউরিটির মধ্যেও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।