প্যারাসিটামল সহ ৩৭টি জরুরি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিল কেন্দ্র

ভারত সরকার জরুরি ব্যবহারের চারটি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য (Essential Drugs) এবং অন্যান্য ৩৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য অপরিহার্য…

Essential Drugs price fixed

ভারত সরকার জরুরি ব্যবহারের চারটি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য (Essential Drugs) এবং অন্যান্য ৩৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য অপরিহার্য ওষুধের মূল্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। জাতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ) এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

এই নিয়ন্ত্রণের ফলে ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেসব সংস্থার ওষুধের দাম ইতিমধ্যে নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে, তাদের বিদ্যমান মূল্য বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপ স্বাস্থ্যসেবা খাতে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

জরুরি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ

এনপিপিএ কর্তৃক নির্ধারিত চারটি জরুরি ব্যবহারের ওষুধের মধ্যে রয়েছে ইপ্রাট্রোপিয়াম: এটি দীর্ঘস্থায়ী বাধাজনিত ফুসফুস রোগে (সিওপিডি) আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে জড়তা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।

এর সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মিলিলিটারে ২.৯৬ টাকা। সোডিয়াম নাইট্রোপ্রুসাইড: এটি একটি ইনজেকশনযোগ্য ওষুধ, যা উচ্চ রক্তচাপের জরুরি অবস্থায়, অস্ত্রোপচারের সময় রক্তপাত কমাতে এবং তীব্র হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মিলিলিটারে ২৮.৯৯ টাকা।

ডিলটিয়াজেম: উচ্চ রক্তচাপ এবং বুকে ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ক্যাপসুলে ২৬.৭২ টাকা।পোভিডোন আয়োডিন: অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে ত্বকের জীবাণুমুক্তকরণ এবং ছোটখাটো ক্ষতের যত্নে ব্যবহৃত এই ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি গ্রামে ৬.২৬ টাকা।

এনপিপিএ-র নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব উৎপাদনকারী সংস্থা ব্র্যান্ডেড বা জেনেরিক ওষুধের দাম নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের (প্লাস জিএসটি) বেশি রাখছে, তাদের দাম কমিয়ে নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনতে হবে। তবে যেসব সংস্থার দাম ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যের নিচে রয়েছে, তারা তাদের বিদ্যমান খুচরা মূল্য বজায় রাখতে পারবে।

অন্যান্য ৩৭টি ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ

জরুরি ওষুধ ছাড়াও, এনপিপিএ ৩৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে , যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ, হৃদরোগের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং ভিটামিনের ঘাটতি পূরণকারী ওষুধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ওষুধ হলো প্যারাসিটামল, অ্যাটোরভাস্টাটিন, অ্যামোক্সিসিলিন এবং মেটফর্মিন।

এছাড়াও, অ্যাসিক্লোফেনাক, প্যারাসিটামল এবং ট্রিপসিন কাইমোট্রিপসিনের সমন্বয়ে তৈরি একটি ওষুধ এবং অ্যাটোরভাস্টাটিন ৪০ মি.গ্রা. এবং ক্লোপিডোগ্রেল ৭৫ মি.গ্রা.-এর সমন্বয়ে তৈরি আরেকটি ওষুধও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এই ওষুধগুলি সাধারণত প্রদাহজনিত রোগ এবং হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

Advertisements

মূল্য নিয়ন্ত্রণের তাৎপর্য

এই মূল্য নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় হ্রাস করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। ভারতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং সংক্রামক রোগের ক্রমবর্ধমান বোঝার প্রেক্ষিতে, এই ধরনের নীতি সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক। এনপিপিএ জানিয়েছে, নির্ধারিত মূল্য জিএসটি ছাড়া, এবং প্রয়োজনে জিএসটি আলাদাভাবে যোগ করা যেতে পারে।

খুচরা বিক্রেতা এবং ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নতুন মূল্য তালিকা দোকানে স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের নিয়ম না মানলে ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার (ডিপিসিও) এবং এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট, ১৯৫৫-এর অধীনে শাস্তির বিধান রয়েছে।

শুল্ক-ঝড়ের ধাক্কা! ভারতের অর্ডার বন্ধ করল অ্যামাজন-ওয়ালমার্ট-টার্গেট

ভারতবর্ষে ওষুধের মূল্য ও প্রাপ্যতা

ভারতের প্রেক্ষাপটে, ওষুধের প্রাপ্যতা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলিতে জেনেরিক ওষুধের প্রাপ্যতা মাত্র ৩৭%, যেখানে বেসরকারি ফার্মেসিতে এটি ৬৩% এবং বেসরকারি ক্লিনিকে ৫৪%। অ-সংক্রামক রোগের (এনসিডি) ওষুধ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়ার ওষুধ, সাধারণত কম প্রাপ্য।

এই পরিস্থিতি ভারতের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে। ভারতের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে, যেখানে ওষুধের মূল্য এবং প্রাপ্যতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী করার একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা।

জরুরি ওষুধ এবং অপরিহার্য ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এই নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে, সাধারণ মানুষের উপর ওষুধের ব্যয়ের বোঝা অনেকাংশে হ্রাস পাবে, এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও সুগম হবে।