কলকাতা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোস আজ বুধবার ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিতানকি এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন (Nepal Tensions)। এই সফরকে তিনি তাঁর “নিয়মিত সীমান্ত পরিদর্শনের” অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নেপালের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করব।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সঙ্গেও কথা বলব।” এই সফরে রাজ্যপালের সঙ্গে থাকবেন লেডি গভর্নর লক্ষ্মী আনন্দ বোস, গভর্নরের এডিসি রাহুল পান্ডে, ওএসডি শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পিএসও রাকেশ পান্ডে এবং সহকারী অভিজিৎ ঠাকুর ও অমিতাভ বোস।
রাজ্যপাল বোস এর আগেও গত ১২ মার্চ, ২০২৫-এ ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিতানকি এবং গোর্সিং বস্তি এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। সেই সফরে তিনি সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর ৪১তম ব্যাটালিয়নের অপারেশনাল এলাকা পরিদর্শন করেন এবং পানিতানকি বর্ডার আউটপোস্টে পুরনো মেচি সেতু পরিদর্শন করেন।
সেখানে শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল সুধীর কুমার তাঁকে সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্রিফিং দেন। এছাড়া, তিনি গোর্সিং বস্তি বর্ডার আউটপোস্টে সৈনিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং এসএসবি-এর নিরাপত্তায় অবদানের প্রশংসা করেন।
নেপালে সাম্প্রতিক অস্থিরতা মাথায় রেখে রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। নেপালে সরকারের সামাজিক মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেনারেশন জি-এর নেতৃত্বে চলমান বিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। নেপালি সেনাবাহিনী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং ১১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করেছে।
এই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এই অস্থিরতার প্রভাব ভারত-নেপাল সীমান্তে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানিতানকি, যা প্রতিদিন ৫০,০০০-এর বেশি মানুষ এবং হাজার হাজার যানবাহনের চলাচলের কেন্দ্র, ভারতের “চিকেন নেক” অঞ্চলে অবস্থিত। এই এলাকা অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং মাদক পাচারের মতো অপরাধের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজ্যপাল বোস তাঁর সফরে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং চোরাচালান বিরোধী কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। তিনি স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আলোচনা করবেন, যারা সীমান্ত এলাকায় বসবাস করে। পানিতানকি বর্ডার আউটপোস্ট, যা ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, গত কয়েক বছরে শতাধিক অপরাধী এবং অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে, যার জন্য এটি সেরা অপারেশনাল বর্ডার আউটপোস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
রাজ্যপাল এসএসবি-এর এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে স্থানীয় জনগণ, সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
এই সফরে রাজ্যপাল স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। গত মার্চে তাঁর সফরে শারদা বিদ্যা মন্দিরের ছাত্রছাত্রীরা সান্তালি, রাজবংশী এবং নেপালি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেছিল, যা তিনি উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। তিনি ছাত্রদের পুরস্কৃত করেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে একটি সম্প্রদায়ের ভোজে অংশ নেন, যা সীমান্তবর্তী জনগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ঐক্যের বন্ধনকে শক্তিশালী করেছিল।
রাইবেরিলিতে রাহুলের কনভয় আটকাল বিজেপি
নেপালের চলতে থাকা অস্থিরতা, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ভারত-নেপাল সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাজ্যপালের এই সফর সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা এবং স্থানীয় জনগণের অভিযোগ শোনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “আমি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সমস্যা বুঝতে চাই এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরব।”