দেশত্যাগী জালিয়াতদের বিপুল সম্পত্তি সরকারের দখলে

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি লোকসভায় জানিয়েছেন যে, অর্থপাচারকারী ও দেশত্যাগী অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় (Assets of Economic Offenders)…

Vijay Mallya, Nirav Modi, and Mehul Choksi's Properties Returned to Banks

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি লোকসভায় জানিয়েছেন যে, অর্থপাচারকারী ও দেশত্যাগী অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় (Assets of Economic Offenders) দখলে আনা হচ্ছে। দেশীয় ব্যাংকগুলির বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করার পর, এই ধরনের অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকার তা ব্যাংকে ফেরত পাঠানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিজয় মালিয়া: ১৪,১৩১ কোটি টাকা ব্যাংকে ফেরত
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়া এক সময় ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, তার বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ ছিল। ভারতীয় সংস্থাগুলি এবং ব্যাংকগুলির সঙ্গে মালিয়ার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলছিল। এর ফলে, তাকে ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হয়।

   

নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিজয় মালিয়ার সম্পত্তির পুরো পরিমাণ, যা মোট ১৪,১৩১ কোটি টাকা ছিল, তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং এর পুরোটাই এখন ভারতীয় ব্যাংকগুলিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি দেশের অর্থব্যবস্থায় বড় ধরনের পুনরুদ্ধার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি দেশের ঋণখেলাপি সমস্যার বিরুদ্ধে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার প্রতি সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।

নীরব মোদী: ১,০৫২ কোটি টাকা ফেরত
নীরব মোদী, ভারতীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান “নীরভানী ডায়মন্ডস” এর মালিক, তিনি ২০১৮ সালে পলাতক হয়ে বিদেশে চলে যান। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাংক থেকে ১৩,৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে।

তবে, ভারতীয় তদন্ত সংস্থা ইডি (ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) তার বিরুদ্ধে ব্যাপক তদন্ত চালিয়েছিল এবং একাধিক দেশ থেকে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। সীতারামন জানান, নীরব মোদীর বিরুদ্ধে চলা তদন্তের ফলস্বরূপ, ১,০৫২ কোটি টাকা ভারতের ব্যাংকগুলিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির একটি বড় ক্ষতি পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরও দৃঢ় হয়েছে।

মেহুল চোকসি: ২,৫৬৫ কোটি টাকা ফেরত
মেহুল চোকসি, যিনি নীরব মোদীর সহকর্মী হিসেবে পরিচিত, তিনি “গেমস ডায়মন্ড” নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তারও বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ ছিল। চোকসি ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে ভারতে ফেরত আনার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এখন, মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে ইডি এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থাগুলি তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, যা মোট ২,৫৬৫ কোটি টাকার মূল্য ছিল। এই টাকা এখন ভারতীয় ব্যাংকগুলিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে চোকসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক অপরাধীদের জন্য কোনও রেহাই নেই
নির্মলা সীতারামন আরও জানান, দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কোনও আপস করবে না। দেশত্যাগী অর্থনৈতিক অপরাধীরা যেভাবে ব্যাংকগুলি এবং সাধারণ জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, সরকারের তরফ থেকে তা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

এছাড়াও, সীতারামন মন্তব্য করেছেন যে, এই পদক্ষেপগুলি শুধুমাত্র একাডেমিক বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি শক্তিশালী বার্তা। সরকারের উদ্দেশ্য হল, যারা দেশীয় অর্থনীতি ও ব্যাংকগুলিকে ঠকিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের সম্পত্তি ফেরত আনা।

এই পদক্ষেপগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারত সরকারের নিষ্ঠুরতা ও দৃঢ়তার পরিচায়ক হবে এই পদক্ষেপ।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টিকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, দেশের ব্যাংকগুলিতে তাদের অর্জিত সম্পত্তি ফেরত আনা একটি বড় সাফল্য। বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী ও মেহুল চোকসির মতো দেশত্যাগী জালিয়াতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানও দৃশ্যমান হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে এমন অপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসাবে কাজ করবে, যারা দেশের অর্থনীতি ও আইন ব্যবস্থার ক্ষতি করতে চায়।