রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে কমল বেতন! মাথায় হাত কর্মচারীদের

শিমলা, ৭ সেপ্টেম্বর: হিমাচল প্রদেশ সরকার প্রায় ১৪,০০০ রাজ্য সরকারি কর্মচারীর জন্য সংশোধিত বেতন স্কেলের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে (Government Decision)। তবে, এই সংশোধন ‘হিমাচল প্রদেশ…

6th vs 7th vs 8th Pay Commission Which Brought the Biggest Salary Hikes for Government Employees?

শিমলা, ৭ সেপ্টেম্বর: হিমাচল প্রদেশ সরকার প্রায় ১৪,০০০ রাজ্য সরকারি কর্মচারীর জন্য সংশোধিত বেতন স্কেলের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে (Government Decision)। তবে, এই সংশোধন ‘হিমাচল প্রদেশ সিভিল সার্ভিসেস (রিভাইজড পে) সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট রুলস ২০২৫’-এর অধীনে করা হয়েছে, যা কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

এই সংশোধনের ফলে সেকশন ৭এ বাদ দেওয়া হয়েছে, যার কারণে অনেক কর্মচারীর বেতন মাসিক ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ইউজিসি স্কেলের অধীনে কর্মরত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কর্মচারী ইউনিয়নগুলি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় নেমেছে এবং এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।

   

সংশোধিত বেতন স্কেলের বিবরণ

হিমাচল প্রদেশ সরকারের এই সংশোধিত বেতন স্কেল (Government Decision) ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এই সংশোধনের অধীনে অপরিবর্তিত মূল বেতনের গুণক ফ্যাক্টর ২.৫৯ থেকে কমিয়ে ২.২৫ করা হয়েছে, যা বেতন হ্রাসের প্রধান কারণ। ফেডারেশন অফ সেক্রেটারিয়াল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতা সঞ্জীব শর্মার নেতৃত্বে কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছেন।

তাঁরা বলছেন, এই বেতন হ্রাস কর্মচারীদের পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছে এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

কর্মচারীদের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

এই সংশোধিত বেতন স্কেলের ফলে প্রায় ১৪,০০০ কর্মচারী আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কর্মচারী ইউনিয়নগুলির মতে, এই সিদ্ধান্ত কর্মচারীদের মনোবলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের আর্থিক সুরক্ষা বিপন্ন করবে। সঞ্জীব শর্মা বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত এবং অগ্রহণযোগ্য। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব এবং এই সংশোধন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করব।”

কর্মচারীরা আশা করছেন যে সরকার তাদের দাবি বিবেচনা (Government Decision) করবে এবং এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।পূর্ববর্তী বেতন সংশোধনের প্রেক্ষাপটএর আগে, ২০২১ সালে হিমাচল প্রদেশ সরকার ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অধীনে প্রায় ২ লাখ কর্মচারীর জন্য সংশোধিত বেতন স্কেল ঘোষণা করেছিল, যা ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল।

তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয় রাম ঠাকুর জানিয়েছিলেন যে এই সংশোধনের ফলে রাজ্যের উপর বার্ষিক ৬,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা পড়বে। সেই সময় কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা এবং পেনশন সুবিধাও সংশোধন করা হয়েছিল।

Advertisements

এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের সময়সীমা তিন বছর থেকে কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছিল। তবে, এবারের সংশোধন পূর্ববর্তী সুবিধার বিপরীতে গিয়ে কর্মচারীদের বেতন হ্রাসের দিকে নিয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও সরকারের অবস্থান

হিমাচল প্রদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মচারীদের বেতন হ্রাসের ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সরকার এখনও এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আনুষ্ঠানিক কোনও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেনি।

২০২১ সালে ঘোষিত বেতন সংশোধনের সময় তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (অর্থ ও কর্মী) প্রবোধ সাক্সেনা জানিয়েছিলেন যে হিমাচল প্রদেশ নীতি আয়োগের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় কেরলের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, মহামারীর সময়ও রাজ্য সরকার কর্মচারীদের বেতন ও বকেয়া সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করেছে।

কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

কর্মচারী ইউনিয়নগুলি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছে। তারা রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছে। সঞ্জীব শর্মা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি পেশ করব, কিন্তু প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে হবে।” কর্মচারীরা আশা করছেন যে সরকার তাদের কথা শুনবে এবং এই সংশোধন বাতিল করে পূর্বের বেতন কাঠামো পুনর্বহাল করবে।

হিমাচল প্রদেশ সরকারের সংশোধিত বেতন স্কেলের এই বিজ্ঞপ্তি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যদিও এর আগে রাজ্য সরকার কর্মচারীদের জন্য সুবিধাজনক বেতন সংশোধনের ঘোষণা করেছিল, এবারের এই পদক্ষেপ কর্মচারীদের আর্থিক সুরক্ষার উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে।

কর্মচারী ইউনিয়নগুলির আন্দোলন এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এই বিষয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে। এই পরিস্থিতি রাজ্যের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।