সংসদের মনসুন অধিবেশনে লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ (Gogoi) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় সরকারের ব্যর্থতার নৈতিক দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানে বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার আগে আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম।
অমিত শাহ কেন এই প্রসঙ্গ তুললেন, তা জানি না। সম্ভবত তিনি ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে বিসিসিআই-এর জেদের কারণ ভালো জানেন। এই ম্যাচগুলো কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে তাঁর কাছে বেশি তথ্য থাকতে পারে।” গগৈ অভিযোগ করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার না করে অতীতের প্রসঙ্গ তুলে এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের আড়ালে নিজের ব্যর্থতা লুকানোর চেষ্টা করেছেন।
গগৈ তাঁর বক্তৃতায় পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, “আজ ছিল সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করার সময়। কিন্তু তারা অতীতের দিকে তাকিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের পিছনে নিজেদের ব্যর্থতা গোপন করতে চেয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল পহেলগাঁও হামলার ব্যর্থতার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে ‘রাজধর্ম’ পালন করা।” তিনি উল্লেখ করেন, ২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
এই হামলা সরকারের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এত বড় হামলা কীভাবে ঘটল? কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না? গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় কে নেবে?”তিনি অমিত শাহের পাকিস্তান-সংক্রান্ত মন্তব্যের জবাবে বলেন, “আমার পাকিস্তান সফরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন? আমি একজন সাংসদ হিসেবে সফর করেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়েছেন। এই বিষয়ে অমিত শাহ কেন কিছু বলেননি?”
তিনি বিসিসিআই-এর ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এই ম্যাচগুলোর পিছনে কী কারণ, সেটা অমিত শাহের বোঝা উচিত। তিনি কেন এই বিষয়ে নীরব?”গগৈ আরও বলেন, “অপারেশন সিঁদুর এবং মহাদেবে জঙ্গিদের হত্যা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্য।
কিন্তু পহেলগাঁও হামলা রোধ করতে ব্যর্থতার দায় সরকারের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ব্যর্থতা এড়িয়ে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তুলে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন।” তিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার উদাহরণ টেনে বলেন, “সেই সময় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিল দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পহেলগাঁও এবং মণিপুরের ঘটনার পরও অমিত শাহ কেন পদে বহাল রয়েছেন?”
অমিত শাহ জবাবে বলেন, “কংগ্রেস পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে জঙ্গিদের জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে পহেলগাঁও হামলার জঙ্গিরা পাকিস্তানি ছিল।”গৌরব গগৈর এই বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে অনেকে তাঁর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, আবার বিজেপি সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
‘বাংলাদেশে চলে যান’, তৃণমূলের মহুয়া, সাবিত্রী, কল্যাণকে একহাত শুভেন্দুর
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পহেলগাঁও হামলা এবং মণিপুর সংঘাত নিয়ে বিরোধীদের এই আক্রমণ আগামী দিনে সরকারের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। গগৈর ‘রাজধর্ম’ প্রসঙ্গ সংসদে এবং জনগণের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা সরকারের নিরাপত্তা নীতির উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।