অপারেশন সিঁদুরে যুদ্ধ বিরতি কেন? মোদীর কাছে জবাবদিহি চেয়ে সংসদে গগৈ

সংসদের বাদল অধিবেশনে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার সময় কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ (Gogoi) তাঁর বক্তৃতায় বিস্ফোরক মন্তব্য করে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি…

Gogoi slams modi

সংসদের বাদল অধিবেশনে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনার সময় কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ (Gogoi) তাঁর বক্তৃতায় বিস্ফোরক মন্তব্য করে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারতের সামরিক জবাব ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পটভূমিতে পাকিস্তানের সঙ্গে হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা নিয়ে তিনি সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাব দাবি করেছেন।

গগৈয়ের বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটাতে মধ্যস্থতা করেছেন। গৌরব গগৈ সংসদে বলেন, “গোটা দেশ, এমনকী বিরোধী দলগুলোও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সমর্থন করছিল।

   

কিন্তু হঠাৎ ১০ মে আমরা জানতে পারি যে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন? আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে জানতে চাই, যদি পাকিস্তান হাঁটু গেড়ে বসতে প্রস্তুত ছিল, তাহলে আপনি কেন থামলেন? কার কাছে আপনি আত্মসমর্পণ করলেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২৬ বার বলেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য করেছেন।” তাঁর এই মন্তব্য সংসদে তীব্র বিতর্কের সূচনা করেছে এবং সরকারের কূটনৈতিক অবস্থান ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যার জবাবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি পরিকাঠামোর উপর নির্ভুল হামলা চালায়। এই অভিযান, যা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত, ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতীক হিসেবে উঠে আসে।

কিন্তু ১০ মে পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়, যা একই দিনে গৃহীত হয়। এই হঠাৎ যুদ্ধবিরতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি নিয়ে বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে স্বচ্ছতা দাবি করছে। গগৈ আরও বলেন, “রাজনাথ সিং জি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন, কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি কখনো বলেননি যে পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা কীভাবে পহেলগাঁওয়ে পৌঁছল।

Advertisements

কিভাবে ২৬ জন মানুষকে হত্যা করল। জাতির স্বার্থে আমাদের প্রশ্ন করা কর্তব্য।” তিনি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এই অভিযান হঠাৎ বন্ধ করা হল এবং এর পিছনে কোনো বৈদেশিক চাপ ছিল কিনা। ট্রাম্পের দাবি যে তিনি বাণিজ্য চুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন, তা ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে গগৈ উল্লেখ করেছেন।

কংগ্রেসের আরেক নেতা পি. চিদম্বরমের মন্তব্যও এই বিতর্কে জ্বালানি যুগিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, পাহালগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগের কোনো প্রমাণ নেই। গগৈ এই বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য এড়িয়ে বলেছেন, চিদম্বরম নিজেই তাঁর বক্তব্যের স্পষ্টীকরণ দেবেন। তবে, এই মন্তব্য সরকারের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যারা পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে।

সংসদে এই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের বক্তব্য প্রত্যাশিত। রাজনাথ সিং ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় বাহিনীর কোনো ক্ষতি হয়নি এবং এটি সম্পূর্ণ সফল ছিল। তিনি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি খারিজ করে বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত ছিল।

কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে তলব ED-র

বিরোধী দলগুলোর এই তীব্র প্রশ্নের মুখে সরকারের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। গগৈয়ের মন্তব্য ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে, যা আগামী দিনে রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে।