অসম কংগ্রেসের প্রধান গৌরব গগৈ (Gogoi) সোমবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। একটি রাজ্য সরকারি প্রকল্প থেকে “সুবিধাভোগ” করার অভিযোগের পক্ষে শর্মার মন্তব্যের জবাবে গগৈ (Gogoi) বলেন, যারা সত্যিই সরকারি প্রকল্পের সহায়তার জন্য প্রয়োজন, তারা উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে গগৈ লিখেছেন, “অসমে একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ডেয়ারি ফার্মের জন্য করদাতাদের ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্লজ্জ উত্তর? ‘ক্ষমতা হারানোর পর তারা কী করবে?’”
গগৈ (Gogoi) আরও অভিযোগ করেছেন যে, অসম সরকার পক্ষপাতিত্ব করছে এবং যারা সরকারের ঘনিষ্ঠ, তারা অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এই প্রথম নয় যে এই সরকারের কাছের লোকেরা অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছেন। এদিকে, যারা সত্যিই সহায়তার প্রয়োজন—প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র কৃষক, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ—তারা তাদের ন্যায্য অংশের জন্য লড়াই করছে, তাদের উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
গগৈ (Gogoi) এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদের শপথের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন এবং হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের টাকা “ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ” সুরক্ষিত করতে অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “এটি শাসন নয়, বরং পদের শপথের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। জনগণের টাকা ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে অপব্যবহার করা হচ্ছে, এবং ক্ষমতাকে দায়িত্ব নয়, বরং অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
এই বিতর্কের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার ‘অম্বুবাচী মহাযোগ’-এর সূচনা ঘোষণা করেছেন, যা মা কামাখ্যার ঐশ্বরিক নারীত্বের বার্ষিক উৎসব। এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আধ্যাত্মিক গুরু এবং ভক্তরা নীলাচল পাহাড়ে সমবেত হবেন ভারতের জন্য প্রার্থনা করতে।
তিনি তীর্থযাত্রীদের অসমে স্বাগত জানিয়ে মা কামাখ্যার আশীর্বাদ কামনা করেন। তাঁর পোস্টে লেখা ছিল, “আজ অম্বুবাচী মহাযোগের শুরু, যা মা কামাখ্যার ঐশ্বরিক নারীত্বের উৎসব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আধ্যাত্মিক গুরু ও ভক্তরা নীলাচল পাহাড়ে ভারতের জন্য প্রার্থনা করতে সমবেত হবেন। আমি সকল তীর্থযাত্রীকে অসমে স্বাগত জানাই এবং মা কামাখ্যার আশীর্বাদ কামনা করি।” এর আগে, ২১ জুন শর্মা চিরাং এবং বক্সা জেলায় নবনির্মিত দুটি জেলা কারাগার উৎসর্গ করেন, যা অঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি পদক্ষেপ।
গৌরব গগৈয়ের (Gogoi) এই আক্রমণ অসমের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তাঁর অভিযোগে সরকারি প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি এবং জনগণের অর্থের অপব্যবহারের গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক আগামী দিনে অসমের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন রাজ্যে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো তাদের আক্রমণ জোরদার করছে।
গগৈয়ের (Gogoi) এক্স পোস্টে তিনি আরও বলেন, “অসমের জনগণের টাকা তাদের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু এই সরকার তা মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। এটি অগ্রহণযোগ্য।” তিনি জনগণের কাছে এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা গগৈয়ের (Gogoi) এই অভিযোগকে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” বলে কটাক্ষ করেছেন। রাজ্যের একজন বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “গৌরব গগৈয়ের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের সরকার স্বচ্ছভাবে কাজ করছে এবং অসমের উন্নয়নের জন্য নিবেদিত। কংগ্রেস তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচাতে এই ধরনের অভিযোগ তুলছে।”
এই বিতর্কের পাশাপাশি, শর্মার সাম্প্রতিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগ, যেমন জেলা কারাগার উৎসর্গ এবং অম্বুবাচী মহাযোগের উদযাপন, রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দেয়। তবে, গগৈয়ের অভিযোগ এই প্রশ্ন তুলেছে যে, সরকারি প্রকল্পগুলো কি সত্যিই জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে, নাকি সেগুলো ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠদের হাতে চলে যাচ্ছে।
অম্বুবাচী মহাযোগের ঘোষণা অসমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শর্মার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এই উৎসব অসমের পর্যটন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রীকে আকর্ষণ করে। তবে, গগৈয়ের মতো বিরোধী নেতারা এই ধরনের উদ্যোগকে “জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা” বলে অভিযোগ করছেন।
হিন্দু দেবতাদের ছবি বিকৃতি, কাঠগড়ায় বাংলাপক্ষের শক্তিরূপা
এই ঘটনা অসমের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে এগোয় এবং গগৈয়ের (Gogoi) অভিযোগের জবাবে শর্মা সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা রাজ্যের রাজনীতির দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিরোধী দলগুলোর জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে, যখন বিজেপি তাদের উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করছে।