ইমেলে ফাঁস কলেজের যৌন হয়রানির অন্ধকার দিক, পলাতক চৈতন্যানন্দ

নয়া দিল্লি: এক প্রাক্তন ছাত্রীর অভিযোগপত্র এবং ভারতীয় বায়ুসেনার এক আধিকারিকের ইমেলের জেরেই সামনে এল দিল্লির একটি নামী ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভিতরে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার…

Swami Chaitanyananda Harassment

নয়া দিল্লি: এক প্রাক্তন ছাত্রীর অভিযোগপত্র এবং ভারতীয় বায়ুসেনার এক আধিকারিকের ইমেলের জেরেই সামনে এল দিল্লির একটি নামী ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভিতরে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থার চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগের কেন্দ্রে স্বঘোষিত গডম্যান স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী (Swami Chaitanyananda) ওরফে ড. পার্থসারথি, যিনি দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে অবস্থিত শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান।

পুলিশ সূত্রে খবর, ১৭ জনেরও বেশি ছাত্রী সরস্বতীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এফআইআরের ভিত্তিতে জানা গেছে, এই অভিযোগ সামনে আসে গত ২৮ জুলাই, যখন এক প্রাক্তন ছাত্রী প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান যে চৈতন্যানন্দ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের যৌনভাবে হেনস্থা করছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই, ১ আগস্ট ভারতীয় বায়ুসেনার এক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইনস্টিটিউটকে ইমেল করে জানান যে তাঁরা একাধিক ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন।

   

ইমেলে বলা হয়, চৈতন্যানন্দ রাতের অস্বাভাবিক সময়ে ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাতেন, অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করতেন এবং একাধিক ছাত্রীকে যৌন সম্পর্কে জড়াতে চাপ দিতেন। এই অভিযোগগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালন পর্ষদ প্রায় ৩০ জন ছাত্রীকে নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বহু ছাত্রী অভিযোগ করেন যে সরস্বতী শুধু অশ্লীল বার্তা পাঠাতেন না, বরং তাঁদের উপর শারীরিক চাপও সৃষ্টি করতেন।

এফআইআরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইনস্টিটিউটের তিনজন মহিলা কর্মী, যার মধ্যে একজন সহযোগী ডিনও রয়েছেন, ছাত্রীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন যাতে তাঁরা সরস্বতীর ইচ্ছায় সম্মতি দেন এবং অভিযোগ দায়ের না করেন। ইনস্টিটিউটের অধিকাংশ ছাত্রীই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি থেকে আসেন বা প্রতিরক্ষা কর্মীদের সন্তান।

তদন্তে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে — ইনস্টিটিউটের বেসমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ভলভো গাড়ি, যার উপর জাল কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট “39 UN 1” লাগানো ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এই গাড়িটি সরস্বতীরই এবং এর জন্য আলাদা মামলা রুজু করা হয়েছে।

২৫ আগস্ট পুলিশ দুটি মামলা করে — একটি যৌন হয়রানির অভিযোগে এবং আরেকটি জাল নম্বরপ্লেট ব্যবহারের জন্য। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ৭৫(২), ৭৯ এবং ৩৫১(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Advertisements

৩২ জন ছাত্রীর সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৭ জন সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে চৈতন্যানন্দ তাঁদের অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছেন, অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বয়ান ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এটি সরস্বতীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ নয়। ২০০৯ সালে ডিফেন্স কলোনি থানায় এবং ২০১৬ সালে বসন্ত কুঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও যৌন হেনস্থার মামলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি কখনও গ্রেফতার হননি।

চৈতন্যানন্দ নিজেকে একজন “খ্যাতনামা অধ্যাপক, লেখক, বক্তা এবং আধ্যাত্মিক দার্শনিক” বলে দাবি করেন এবং তাঁর লেখা ২৮টি বই রয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি পলাতক। পুলিশ তাঁর খোঁজে একাধিক রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে।

এই ঘটনার পর শ্রী শারদা পীঠম কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে, চৈতন্যানন্দের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই এবং তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তারা দায়ী নয়।

এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তথাকথিত গডম্যানদের মুখোশের আড়ালে কী ভয়ঙ্কর বাস্তবতা লুকিয়ে থাকতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News