কাশ্মীর উপত্যকা (kashmir Attack) বর্তমানে জঙ্গি কার্যকলাপের নতুন ঢেউয়ের মুখোমুখি। পহেলগাঁও, বান্দিপোরায় লাগাতার সন্ত্রাসবাদী হামলার পর গোটা কাশ্মীরে জারি হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। ঠিক এই সময়েই শুক্রবার শ্রীনগরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ওই বৈঠকে শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়, উঠে আসে এক বিশেষ বার্তাও—শ্রীমদ্ভগবদগীতার শ্রীকৃষ্ণ।
গীতার শ্রীকৃষ্ণ কেন বৈঠকে?
বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি ব্যানার রাখা হয়, যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণের ছবি, এবং তার নিচে লেখা রয়েছে গীতার একটি বিখ্যাত শ্লোক:
“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাঽত্মানং সৃজাম্যহম্॥”
অর্থাৎ, ‘‘যখনই ধর্মের অবক্ষয় হয়, আর অধর্মের উৎ্থান ঘটে, তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করি’’—এই বার্তাই যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নৈতিক অবস্থান প্রকাশ করছে। সেনা প্রধান এই বার্তার মাধ্যমে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন যে, জঙ্গি ও দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু এক সামরিক অভিযান নয়, এটি এক নৈতিক কর্তব্য।
উপত্যকায় সেনা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনার উচ্চপদস্থ কর্তা, পুলিশ আধিকারিক এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। সাম্প্রতিক হামলার পেছনে কারা রয়েছে, কোথা থেকে অস্ত্র সরবরাহ হচ্ছে, কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা ঢুকছে—এই সব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, “দেশবিরোধী শক্তি যতই চেষ্টা করুক না কেন, কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখতেই হবে। আমাদের প্রতিটি জওয়ান সেই শপথ নিয়ে ময়দানে রয়েছে।”
গীতার বার্তা সেনার মনোবল বাড়ায়
সেনা সূত্রের দাবি, গীতার বার্তা এবং শ্রীকৃষ্ণের দর্শন সেনা জওয়ানদের মধ্যে এক বিশেষ মনোভাব তৈরি করে—আত্মত্যাগ, কর্তব্য, এবং ন্যায়ের পথে অটল থাকা। এই বার্তা শুধু বাহ্যিক নয়, একটি মানসিক প্রস্তুতির প্রতীক। বিশেষত যখন কাশ্মীর আবার উত্তপ্ত, তখন সেনাবাহিনীর এমন নৈতিক দৃঢ়তা কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
কাশ্মীরজুড়ে চিরুণি তল্লাশি
শ্রীনগরের এই বৈঠকের আগে এবং পরে বান্দিপোরাসহ কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় চিরুণি তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। পহেলগাঁও হামলায় জড়িত জঙ্গিদের খোঁজে চলছে অভিযান। বান্দিপোরায় সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে ইতিমধ্যে লস্কর-ই-তৈবার এক কম্যান্ডার নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই সেনা জওয়ান। পরিস্থিতি থমথমে, তবে সেনা প্রহরায় উপত্যকা সুরক্ষিত।
একটি শক্ত বার্তা দেশের প্রতি
শ্রীকৃষ্ণ এবং গীতার দর্শন শুধুমাত্র ধর্মীয় আবহ তৈরি করার জন্য নয়, বরং এটি এক রাষ্ট্রীয় মনোভাবের প্রতিফলন। যে মনোভাব বলে—অধর্ম যত শক্তিশালী হোক না কেন, ধর্ম এবং ন্যায়ের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। ঠিক এই দর্শনের ছায়াতেই সেনা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
শ্রীনগরে সেনা প্রধানের এই বৈঠক ছিল যেমন কৌশলগত, তেমনই ছিল মনস্তাত্ত্বিক এবং নৈতিক শক্তি জাগানোর প্রয়াস। গীতার শ্লোক এবং শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতি এই বার্তাই দেয়—যেখানে অন্যায়, সেখানে প্রতিরোধ অনিবার্য। এবং সেই প্রতিরোধ হবে শ্রীকৃষ্ণের মতোই ন্যায়ের পক্ষে, ধর্মের রক্ষায়।