কেন্দ্রীয় টেক্সটাইল মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (Giriraj Singh) গত সোমবার কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। শিবকুমারের সংবিধান সংক্রান্ত কথিত মন্তব্যের জেরে তিনি তাঁকে “বরখাস্ত” করার দাবি জানিয়েছেন। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের সরকারি চুক্তিতে মুসলিমদের জন্য ৪ শতাংশ কোটা প্রদানের সিদ্ধান্ত। গিরিরাজ সিং এএনআই-কে বলেন, “দেশকে ইসলামিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে… লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধীর দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ডি কে শিবকুমারকে বরখাস্ত করা উচিত।” এই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতারা সোমবার শিবকুমারের মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এই অভিযোগের জবাবে বিজেপির বিরুদ্ধে “বিভ্রান্তিকর কৌশল” অবলম্বনের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, শিবকুমার এই ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি এবং বিজেপি কর্ণাটক সরকারের নীতিগত ঘোষণাকে “সম্পূর্ণভাবে বিকৃত” করছে। জয়রাম রমেশ এএনআই-কে বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য, বিশেষ করে ওবিসি হিসেবে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছিল। তারপর থেকে অনেক মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন। এটা বিজেপির একটা বিভ্রান্তিকর কৌশল।”
আরো দেখুন একদিনে রেকর্ড বিক্রি ১০০০ গোল্ড কার্ড, প্রভাব মার্কিন অৰ্থনীতিতে
তিনি আরও যোগ করেন, “সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর এবং বিচারপতি যশবন্ত বর্মার আচরণ নিয়ে আলোচনার জন্য আমি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এই কর্ণাটক ইস্যু তুলে এজেন্ডা ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া হলো।”
শিবকুমার নিজে এই বিতর্কে বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্যকে “বিকৃত” করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এএনআই-কে বলেন, “এ নিয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না। এখানে কোনো লুকোচুরি নেই।
কোটার বিষয়ে বেশ কয়েকটি রায় এসেছে এবং প্রতিটি রায়ের পর সংবিধানে সংশোধনী এসেছে। তারা (বিজেপি) আমার কথাকে বিকৃত করছে। আমি জয়রাম রমেশের প্রিভিলেজ মোশনের পদক্ষেপে খুশি এবং আমি আইনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি।” তিনি আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি কখনো বলিনি যে আমরা সংবিধান পরিবর্তন করব। বিজেপি প্রচার চালাচ্ছে। আমি এটার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করব।”
শিবকুমার আরও বলেন, “আমি ৩৬ বছর ধরে জনজীবনে আছি এবং আমার মৌলিক জ্ঞান আছে। বিজেপি আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। আমি শুধু বলেছিলাম যে আদালতের নির্দেশে সংবিধানে পরিবর্তনের নজির আছে। আমি কখনো বলিনি যে আমরা সংবিধান বদলাব। কংগ্রেস এমন একটি জাতীয় দল, যারা সংবিধান প্রণয়ন করেছে। আমরা এর গুরুত্ব অন্যদের থেকে ভালো বুঝি।” তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র সাম্প্রতিক বাজেটে জনগণের প্রতি ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন অন্য ইস্যু তুলে মনোযোগ ঘোরানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, সোমবার রাজ্যসভায় শিবকুমারের মন্তব্য নিয়ে হট্টগোল দেখা দেয়। বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেন, তিনি “সংবিধান পরিবর্তনের” কথা বলেছেন। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গের কাছে কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করতে চান। তিনি বলেন, “শিবকুমারের মন্তব্য অত্যন্ত গুরুতর।” খড়গে জবাবে বলেন, “বাবাসাহেব আম্বেদকরের রচিত সংবিধান কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংরক্ষণ শেষ করা যাবে না। এটি রক্ষার জন্য আমরা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা করেছি।”
রিজিজু শিবকুমারের পদত্যাগের দাবি জানান এবং বলেন, “সংবিধান প্রণেতারা ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণের বিরোধী ছিলেন। আপনাদের সাহস থাকলে আজই উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ গ্রহণ করুন।” কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাও কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, “কংগ্রেস সংবিধানের রক্ষক বলে দাবি করে, কিন্তু তারা এটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আম্বেদকর নিজে বলেছিলেন, সংবিধানের ভিত্তিতে ধর্মীয় সংরক্ষণ হবে না। কিন্তু কর্ণাটকে চুক্তিতে ৪ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে।”
এই ঘটনা লোকসভা ও রাজ্যসভায় উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং উভয় কক্ষে অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। শিবকুমারের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক যে সহজে থামবে না, তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “মিডিয়ার রিপোর্টিংয়ে কোনো ভুল নেই। বিজেপি আমার কথাকে বিকৃত করে আমার নাম অহেতুক টেনে এনেছে।” এই বিতর্কের মধ্যে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও জটিল আকার নিতে পারে।