পহেলগাঁও আবহে ওপার বাংলার সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য গিরিরাজের

ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (giriraj) শনিবার বলেছেন, ভারতের নীতি ‘জীবন দাও, জীবন…

giriraj on bangladesh minority

ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (giriraj) শনিবার বলেছেন, ভারতের নীতি ‘জীবন দাও, জীবন নাও’ হলেও, প্রত্যেককে তাদের কাজের ফল ভোগ করতে হবে। কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় কখনো সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কিছু করেনি।

   

বাংলাদেশে হিন্দুদের বেঁচে থাকা কঠিন

কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের উপর বড় অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু যে যা করে, তার ফল ভোগ করতে হয়। বাংলাদেশকেও হিন্দুদের উপর যা করেছে, তার ফল ভোগ করতে হবে।”

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপট

গিরিরাজ সিংয়ের (giriraj) এই মন্তব্য এসেছে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে, যেখানে ২২ এপ্রিল ২৬ জন পর্যটক নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-সমর্থিত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সার্ক ভিসা ছাড় স্কিম (SVES) বাতিল, উভয় দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা এবং ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে বলেছেন, “এই হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা এবং তাদের ষড়যন্ত্রকারীরা কল্পনাতীত শাস্তির মুখোমুখি হবে। সন্ত্রাসবাদের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করার সময় এসেছে। ১৪০ কোটি ভারতীয়দের ইচ্ছাশক্তি এখন সন্ত্রাসের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে।”

খাজা আসিফের একটি ভিডিও ক্লিপ

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের একটি ভিডিও ক্লিপ, যা ২৫ এপ্রিল ভাইরাল হয়েছে, তাতে তিনি স্বীকার করেছেন যে পাকিস্তান গত তিন দশক ধরে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন, প্রশিক্ষণ এবং অর্থায়ন করে আসছে। স্কাই নিউজের ইয়ালদা হাকিমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং ৯/১১-এর পর যুদ্ধে যোগ দিয়ে এই ভুল করেছি।

এটি পশ্চিমা দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের জন্য করা হয়েছিল। আমরা এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।” তিনি ভারতের সঙ্গে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’-এর সম্ভাবনার কথাও বলেন, যা পাকিস্তানের অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে।

কেরালা বধ করে সুপার কাপের সেমিতে মোহনবাগান

আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ

পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা বাতিল (দীর্ঘমেয়াদী, কূটনৈতিক এবং সরকারি ভিসা ছাড়া) এবং পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ। ভারতও ইসলামাবাদে তার হাইকমিশন থেকে সমমানের উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করছে। ২০২৫ সালের ১ মে-র মধ্যে উভয় দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্য (giriraj)

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে গিরিরাজ সিংয়ের (giriraj)মন্তব্য হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক হিংসার প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মন্দির ভাঙা এবং হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ফলাফল তাদের ভোগ করতে হবে। এই মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে।

পহেলগাঁও হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ব্যাপক বুকিং বাতিল এবং পর্যটকদের প্রস্থান স্থানীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “পর্যটকদের ভয় পাওয়া বোধগম্য, কিন্তু তারা যদি এখন কাশ্মীর ছেড়ে চলে যায়, তবে আমাদের শত্রুরা জয়ী হবে।”  (giriraj) তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইসলামাবাদ প্রথমে হামলা অস্বীকার করে ভারতের উপর দোষ চাপিয়েছিল।

জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) হামলার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পাঁচজন জঙ্গিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি—আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা—এবং দুজন স্থানীয়—আদিল গুরি এবং আহসান। প্রত্যেকের জন্য ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান সিন্ধু জল চুক্তির স্থগিতকরণকে ‘জল যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশপথ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে তিন নিহত—বিতান অধিকারী, সমীর গুহ এবং মণীশ রঞ্জন মিশ্র—এর পরিবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে, এবং তদন্ত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো আগামী দিনে পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে।