নতুন বছরের শুরুতে ব্যবসায়িক দুনিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের (Reliance) মালিক মুকেশ অম্বানী (Mukhes Ambani) এবং আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির (Gautam Adani) মধ্যে এক নতুন চ্যালেঞ্জের সূচনা হতে চলেছে। পেট্রোরসায়ন শিল্পে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন গৌতম আদানি। দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোরসায়ন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে মুকেশ অম্বানীর রিলায়েন্স, কিন্তু এখন আদানি গোষ্ঠী যে এই সেক্টরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তা স্পষ্ট হয়েছে।
গৌতম আদানি, যিনি মূলত শক্তি, খনিজ এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রের ক্ষেত্রে নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন, এবার পেট্রোরসায়নের জগতে প্রবেশ করার জন্য তৎপর। তাইল্যান্ডের একটি সংস্থা ইন্ডোরামা রিসোর্সেস লিমিটেডের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে তিনি এই শিল্পে তার অবস্থান গড়তে চলেছেন। ইন্ডোরামা বিশ্বের অন্যতম প্রধান পেট্রোরসায়ন সংস্থা এবং এটি আদানি গোষ্ঠীর জন্য একটি শক্তিশালী সঙ্গী হিসেবে কাজ করবে।
নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠী এবং ইন্ডোরামা যৌথভাবে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে, যার নাম রাখা হয়েছে ‘ভালোর পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড’ (VPL)। এই কোম্পানিতে আদানি গোষ্ঠী এবং ইন্ডোরামার সমান ৫০ শতাংশ শেয়ার থাকবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গৌতম আদানি পেট্রোরসায়ন খাতে তার ব্যবসায়িক স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছেন এবং মুকেশ অম্বানীর রিলায়েন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছেন।
তাছাড়া, আদানি গোষ্ঠীর অধীনে থাকা আদানি পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড (APL) এই উদ্যোগের অন্যতম অংশীদার। আদানি পেট্রোকেমিক্যালস এবং ইন্ডোরামার যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই নতুন কোম্পানি, “ভালোর পেট্রোকেমিক্যালস”, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস শিল্পে আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক স্তরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে। ৪ জানুয়ারি সরকারিভাবে নথিভুক্ত হওয়া এই সংস্থার মূল কার্যালয় মুম্বই শহরে অবস্থিত, যা ব্যবসায়িক দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গৌতম আদানি এবং মুকেশ অম্বানী, দুজনেই ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী পরিবারগুলির প্রতিনিধি। তবে পেট্রোরসায়ন শিল্পে রিলায়েন্সের একচেটিয়া আধিপত্য অনেকদিন ধরে বজায় ছিল। কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর নতুন পদক্ষেপের ফলে এই শিল্পে নয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হতে চলেছে। আদানি গোষ্ঠীর ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে শেয়ারবাজারে ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ভালোর পেট্রোকেমিক্যালসের হাত ধরে নতুন একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী তৈরি হওয়া বাজারে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠী শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের অবস্থান শক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে, ভারতের পেট্রোরসায়ন খাতে নতুন করে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়েছে, যা মুকেশ অম্বানীর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
গৌতম আদানি, যিনি নিজেই জানেন ব্যবসায়িক দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা কেমন হতে পারে, তার এই নতুন উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় প্রভাব ফেলবে তা বলাই যায়। তবে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শক্তি এবং পরিশ্রমী দিক থেকে কোনো কমতি নেই। এখন দেখার বিষয় হলো, আদানি গোষ্ঠী এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ পরস্পরের প্রতিযোগিতায় কোথায় দাঁড়িয়ে থাকে।