গৌতম আদানীর বিরুদ্ধে কী চক্রান্ত করেছেন মার্কিন ধনকুবের জর্জ সরোস? ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে আদানি (Gautam Adani) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে, গত বৃহস্পতিবার বিজেপি (BJP) শাসিত সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগগুলির প্রতি পাল্টা যুক্তি পেশ করা হয়েছে। বিজেপির দাবি, যে চারটি রাজ্যে এই অভিযোগ উঠেছে, সেগুলির মধ্যে কোনো একটি রাজ্যও বিজেপি (BJP) শাসিত ছিল না। এই মন্তব্যটি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) এবং অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষের জবাবে দেওয়া হয়েছে।
কাসভ বিচার পেলে ইয়াসিন নয় কেন? কাশ্মীরি সন্ত্রাসী নেতার শুনানি নিয়ে সিবিআইকে ‘সুপ্রিম’ খোঁচা
আমেরিকার আদালতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করার পর, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো এই বিষয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু করেছে। তারা অভিযোগ করছে যে, আদানি গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসার সুবিধা নিচ্ছে। তবে বিজেপি এই অভিযোগকে নস্যাৎ করে দাবি করেছে যে, এসব কেবল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, বিশেষ করে আমেরিকার ধনকুবের জর্জ সোরসের দ্বারা চালিত এক নোংরা খেল। বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালবীয় তার এক্স পোস্টে এই বিষয়ে মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন যে, ‘‘জর্জ সোরসের (George Sosos) হাতের পুতুল হওয়াই এখন কংগ্রেসের পছন্দ।’’
এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি, কারণ গত বছর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপি ও শেয়ার দরের হেরফেরের অভিযোগ তুলেছিল। তখনও বিজেপি সোরসের বিরুদ্ধে একটি চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছিল।
প্রমাণ ছাড়াই নিজ্জর হত্যা মামলায় মোদীকে দায়ী করল কানাডার সংবাদমাধ্যম
২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ঘুষ দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা মূলত রাজ্য সরকারের স্তরে হয়ে থাকতে পারে বলে বলা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে একাধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে, বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘এই রাজ্যগুলির মধ্যে কোনো একটি রাজ্যও বিজেপি শাসিত ছিল না,’’ এর মাধ্যমে তারা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে যে, বিজেপি সরকারের কোনো দায় নেই এই ঘটনার মধ্যে।
এই সময়কালে, ভারতের কয়েকটি রাজ্য, যেখানে এই ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং রাজস্থান ছিল। এদের মধ্যে বিজেপি কোনো রাজ্যই শাসন করছিল না, বরং সেখানে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলগুলির সরকার ছিল। বিজেপির পক্ষ থেকে এই যুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে, তারা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে।
বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালবীয়, যিনি এক্স (আগের নাম টুইটার) পোস্টে বিজেপির পক্ষ থেকে এসব মন্তব্য করেছেন, দাবি করেছেন যে এই পুরো ঘটনার পেছনে জর্জ সোরসের ‘চক্রান্ত’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখন জর্জ সোরসের হাতের পুতুল হয়ে গেছে।’’ এই মন্তব্যটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত বছর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সোরসের নামও উল্লেখ করেছিল। বিজেপি তখন দাবি করেছিল যে সোরসের পেছনে একটি নীতিগত চক্রান্ত রয়েছে যা ভারতের সরকার এবং তার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করতে চায়।
এখানে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল যে জর্জ সোরস একজন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এবং বহু রাজনৈতিক বিষয়ের সাথে জড়িত। সোরসের বিরুদ্ধে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ নতুন কিছু নয়; এর আগে ২০০০ সালে ‘নোটবন্দি’র সময়েও তার নাম উঠে এসেছিল। বিজেপি দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, সোরস ভারতীয় অর্থনীতি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
লাওসে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠক চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা দুপক্ষের
গত বছর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপি এবং শেয়ারদরের ভুলপ্রক্রিয়ায় উত্তরণের অভিযোগ তোলা হয়। প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার দরের অতিরিক্ত বাড়ানো এবং অস্বচ্ছ লেনদেনের কথা বলা হয়েছিল। এরপর, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থা এই বিষয়ে খবর প্রকাশ করে এবং ভারতের শেয়ার বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পর বিজেপি আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
তবে বিরোধীরা দাবি করেছে যে, এই সমস্ত সমস্যার পেছনে আদানি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রভাব এবং অনৈতিক লেনদেনের হাত রয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী ভারতের ব্যবসা এবং রাজনীতিতে এক অশুভ সঙ্গম তৈরি করেছে।’’