অসম: অসমের জনপ্রিয় গায়ক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক জুবিন গর্গের (Zubeen Garg) মৃত্যু ঘিরে জল্পনা বাড়ছে। তাঁর স্ত্রী গরিমা গার্গ সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং উৎসবের প্রধান আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত দায়ী এই অকাল মৃত্যুর জন্য।
১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে ভারত-সিঙ্গাপুর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন জুবিন। কিন্তু সেই সফরই কাল হয়ে দাঁড়ায়। অনুষ্ঠান চলাকালীন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এক পিকনিকে, যেখানে সাঁতার কাটতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান। সিঙ্গাপুর পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে এটি নিছক ডুবে যাওয়ার ঘটনা, কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নয়।
তবে গরিমা গর্গ এই রিপোর্টে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, “জুবিন কখনও পিকনিকে যাওয়ার কথা বলেননি। আমি ওর সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিলাম ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে। সেদিনও ও ক্লান্ত ছিল। হয়তো জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ও সাধারণত দিনে বিশ্রাম নেয়, কিন্তু সেদিন বিশ্রামের সুযোগই পায়নি।”
Also Read | তেজস Mk2 এর প্রথম উড়ানের তারিখ ঘোষণা
তিনি আরও জানান, জুবিন নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলেন। কিন্তু সেদিন তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “সিদ্ধার্থ জানিয়েছিল যে জুবিন জলে খিঁচুনি পেয়েছিল। কিন্তু ওর কখনও হৃদরোগের সমস্যা ছিল না। এটা খুব অস্বাভাবিক।”
ঘটনার পরেই অসমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) এই মামলায় নাম লেখায়। বুধবার দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও শ্যামকানু মহন্তকে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের উদ্দেশ্য ছাড়া হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবহেলায় মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরপরই শ্যামকানুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সিআইডি বিপুল নথিপত্র উদ্ধার করে। একাধিক প্যান কার্ড, সরকারি অফিসের প্রায় ৩০টি সিলমোহর এবং বেনামী সম্পত্তির কাগজপত্র জব্দ হয়। ফলে তদন্তে নতুন মোড় নেয় এই রহস্যময় মৃত্যু।
Also Read | “POK-তে বিক্ষোভ! নিহত ১২ নাগরিক, উঠেছে শাসকবিরোধী স্লোগান
অসম জুড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে শ্যামকানু মহন্ত ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। অনেক ভক্তই বিশ্বাস করছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয় বরং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
২৩ সেপ্টেম্বর কামারকুচি গ্রামে জুবিনের শেষকৃত্যে মানুষের ঢল নামে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে শেষ বিদায় জানানো হয় এই কিংবদন্তি শিল্পীকে।
স্ত্রী গরিমা গর্গ বলেন, “আমরা ন্যায় চাই। মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। আমি বিশ্বাস করি সত্য প্রকাশ পাবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “জুবিন সবসময় বলত, আমি কেবল নিজের জন্য নই, আমি মানুষের জন্য। আজ মানুষের ভালোবাসা প্রমাণ করছে ও কতটা প্রিয় ছিল।”