সিহোর শহরে ৩০০ প্যান্ডেলে বাপ্পার আগমনে উৎসবের আমেজ

সিহোর: ভক্তি ও আনন্দে ভরপুর সিহোর শহর। বুধবার সিহোরে পালিত হল গণেশ চতুর্থীর পবিত্র উৎসব, আর সেই উপলক্ষে শহরের ঐতিহাসিক চিন্তামণ গণেশ মন্দিরে উপচে পড়ল…

সিহোর শহরে ৩০০ প্যান্ডেলে বাপ্পার আগমনে উৎসবের আমেজ

সিহোর: ভক্তি ও আনন্দে ভরপুর সিহোর শহর। বুধবার সিহোরে পালিত হল গণেশ চতুর্থীর পবিত্র উৎসব, আর সেই উপলক্ষে শহরের ঐতিহাসিক চিন্তামণ গণেশ মন্দিরে উপচে পড়ল ভক্তদের ঢল। ভোর হতেই মন্দিরের প্রধান ফটকের বাইরে শুরু হয় দীর্ঘ লাইন। মন্দির প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে ভক্তদের “গণপতি বাপ্পা মোরয়া” ধ্বনিতে। সকাল থেকে চলতে থাকে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, ভজন-কের্তন এবং নানা ধর্মীয় আচার। দুপুর ঠিক ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ পূজা-পাঠসহ মহাআরতি, যাতে শুধু সিহোর নয়, ভোপাল, ইন্দোর, বিদিশা, রাজগড় এবং রায়সেন জেলা থেকেও হাজার হাজার ভক্ত অংশ নেন।

মহাআরতির পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দশদিনব্যাপী গণেশ উৎসব মেলা। মন্দিরে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে প্রশাসন ও মন্দির কমিটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শতাব্দীপ্রাচীন এই মন্দিরটি দেশের ৮৪টি সিদ্ধ গণেশ মন্দিরের মধ্যে অন্যতম। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পণ্ডিত চারু চন্দ্র ব্যাস জানিয়েছেন, প্রায় দুই হাজার বছর আগে নির্মিত এই মন্দিরে ভগবান গণেশ স্বয়ং প্রতিমা রূপে বিরাজমান আছেন। ইতিহাস ও বিশ্বাসের এই অনন্য সংমিশ্রণ প্রতি বছরই গণেশ চতুর্থীতে অগণিত ভক্তকে টেনে আনে।

   

এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন এক বিশেষ প্রথা। ভক্তরা তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য মন্দিরের পিছনের দেওয়ালে উল্টো স্বস্তিক অঙ্কন করেন। ইচ্ছা পূর্ণ হলে আবার এসে সেই স্বস্তিক সোজা করেন। এই প্রথা আজও ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস ও ভক্তির প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে।

শুধু মন্দির নয়, গোটা সিহোর জুড়েই আজ যেন উৎসবের আমেজ। এবছর শহর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলে ৩০০-রও বেশি গণপতি প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে রঙিন আলো, আতশবাজি এবং শোভাযাত্রায় ভগবান গণেশের বিভিন্ন রূপের প্রতিমা বসানো হয়েছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কোতোয়ালি চৌরাস্তার ‘কিং অফ কোতোয়ালি’ মণ্ডপে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ভক্তদের মুগ্ধ করছে।

Advertisements

গণেশ উৎসব মানেই শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক উৎসব। মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশপাশের রাস্তায় বসেছে বিশাল মেলা। খেলনা, মিষ্টি, প্রসাদ এবং পুজোর সামগ্রীর দোকানে সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে। শিশুদের জন্য নানা রকমের নাগরদোলা, রাইড এবং গেম স্টল বসেছে। নারী-পুরুষেরা কেনাকাটা ও ভক্তিতে ব্যস্ত।

দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে প্রশাসন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিশেষ ট্র্যাফিক প্ল্যান চালু করেছে। মন্দির সংলগ্ন রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। ছোট গাড়িগুলি মন্দির থেকে ১০০ মিটার দূরে চিহ্নিত পার্কিংয়ে রাখা হচ্ছে। শহরের নানা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। সিএসপি অভিনন্দনা শর্মা জানিয়েছেন, এই বিশেষ ট্র্যাফিক প্ল্যান অনন্ত চতুর্দশী পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

গণেশ চতুর্থী শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি মানুষের মিলনমেলা। ঢাকঢোলের গর্জন, ভজন-কের্তনের সুর এবং গণপতি বাপ্পার জয়ধ্বনি গোটা সিহোর শহরকে এক অনন্য ভক্তিমূলক আবহে ভরিয়ে তুলেছে। ভক্তদের বিশ্বাস, সিদ্ধিবিনায়ক গণপতি তাঁদের জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদ দূর করে সমৃদ্ধির আশীর্বাদ দান করবেন।