মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেইল (gail plant) (গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড)-এর একটি প্ল্যান্ট থেকে বুধবার ভোরে মিথেন গ্যাসের লিকেজের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ভোপালের কাছে অবস্থিত এই প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস লিক হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে লিকেজ বন্ধ করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রাইসেন জেলার ওবেদুল্লাগঞ্জের কাছে অবস্থিত গেইলের এই প্ল্যান্টটি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিচিত।
ঘটনার বিবরণ
বুধবার ভোর প্রায় ৩টার দিকে প্ল্যান্টের (gail plant) একটি পাইপলাইনে ফাটল দেখা দেয়, যার ফলে মিথেন গ্যাস বেরিয়ে আসতে শুরু করে। মিথেন গ্যাস অত্যন্ত দাহ্য এবং এর উপস্থিতি বাতাসে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফলে, প্ল্যান্টের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ঘুম থেকে জেগে গ্যাসের গন্ধ এবং অস্বাভাবিক শব্দ শুনে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
স্থানীয় প্রশাসন এবং গেইলের (gail plant) কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন। গেইলের একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাইপলাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি বন্ধ করে দেয়।
প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর ভোর ৫টার দিকে গ্যাস লিকেজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়। গেইলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমাদের প্রযুক্তিগত দল দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে লিকেজ বন্ধ করেছে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং জনসাধারণের জন্য কোনও ঝুঁকি নেই।”
চেন্নাইয়িনের বিপক্ষে দুই তারকা ফুটবলারকে পাচ্ছে না মুম্বাই সিটি
অরবিন্দ কুমার দুবে জানিয়েছেন (gail plant)
রাইসেনের জেলা প্রশাসক অরবিন্দ কুমার দুবে জানিয়েছেন, “গ্যাস লিকেজের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। প্ল্যান্টের আশপাশের এলাকা থেকে সাময়িকভাবে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে, লিকেজ বন্ধ হওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করছি যে তাদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
মিথেন গ্যাসের লিকেজ পরিবেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ। মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, যা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় বায়ুমণ্ডলে তাপ ধরে রাখতে বেশি কার্যকর। পরিবেশবিদরা এই ঘটনার পর গেইলের প্ল্যান্টে (gail plant) নিরাপত্তা মান এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন তুলেছেন।
ভোপালের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশন’-এর সদস্য রাকেশ শর্মা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা শিল্প সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। মিথেন লিকেজ শুধু স্থানীয় মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকেও আরও জটিল করে।”
এর আগেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা
গেইলের প্ল্যান্টে (gail plant) এর আগেও ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, তবে এটি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্যাস লিকেজের ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। ওবেদুল্লাগঞ্জের বাসিন্দা রমেশ সিং বলেন, “আমরা সবসময় ভয়ে থাকি যে প্ল্যান্ট থেকে কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ঘটনার পর আমাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।”
গেইল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে
ঘটনার পর গেইল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে তারা প্ল্যান্টের সমস্ত পাইপলাইন এবং সরঞ্জামের একটি বিস্তৃত তদন্ত করবে। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি এবং নিশ্চিত করছি যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” গেইল আরও জানিয়েছে যে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করবে।
মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেছেন
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে এই ঘটনার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং রাজ্য সরকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ।”
এই ঘটনা ভোপালের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একটি স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৮৪ সালে ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড প্ল্যান্টে মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লিকেজের ঘটনা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনাগুলোর একটি। যদিও এবারের ঘটনা ততটা মারাত্মক নয়, তবু এটি শিল্প নিরাপত্তার গুরুত্ব এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং মধ্যপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এই ঘটনার পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিথেন লিকেজের ফলে স্থানীয় জলবায়ু এবং বায়ুমণ্ডলের উপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এই ঘটনার পর স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গেইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে দাবি করছেন যে প্ল্যান্টটি আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক। স্থানীয় নেতা রাজেশ পাটেল বলেন, “আমরা বারবার বলেছি যে এই প্ল্যান্ট আমাদের জীবনের জন্য ঝুঁকি। সরকারের উচিত এটি অন্যত্র স্থানান্তর করা।”
গেইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে
গেইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করবে। সংস্থাটি একটি জনসচেতনতা প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করছে, যাতে মানুষকে গ্যাস লিকেজের মতো পরিস্থিতিতে কীভাবে নিরাপদ থাকতে হবে তা জানানো হবে। এই ঘটনা শিল্প নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলোর উপর এখন চাপ রয়েছে যেন এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়।