মধ্যপ্রদেশের খান্দ্বা জেলার মহাদেবগড় মন্দিরে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসাহ ও উল্লাসের সৃষ্টি করেছে। হাসিনা বীবী, যিনি এখন রুক্মিনী নামে পরিচিত, তাঁর তিন ছেলে ফরিদ (অক্ষয়), আসলাম (অজয়) এবং রশীব (রাজকুমার)-এর সঙ্গে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্মে ফিরে (Ghar Wapsi) এসেছেন। এই ঘটনা ‘ঘর ওয়াপসি’ (Ghar Wapsi) আন্দোলনের একটি অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এই ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠানটি প্রথাগত হিন্দু রীতিনীতি, যেমন মুণ্ডন, যজ্ঞ, এবং সামূহিক প্রার্থনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, যা সনাতন ধর্মের শুদ্ধিকরণ ও নতুন জীবনের সূচনার প্রতীক।
Read Hindi: हसीना से रुक्मिणी, असलम से अजय: खंडवा में सनातन धर्म में परिवार की घर वापसी
অনুষ্ঠানটি মহাদেবগড় মন্দির কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছিল। রুক্মিনী এবং তাঁর পরিবার শুদ্ধি করণ (পবিত্রকরণ) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল যজ্ঞ, দেবতার অভিষেক, এবং ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের মন্ত্র উচ্চারণ। মন্দিরের পুরোহিতরা এই পরিবারকে সনাতন ধর্মের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়েছেন। রুক্মিনী জানিয়েছেন, “এটি কোনো তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত ছিল না। বছরের পর বছর ধরে আমার মন সনাতন ধর্মের দিকে ঝুঁকছিল। এর সর্বজনীনতা, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, এবং ধর্ম ও কর্মের বার্তা আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে।” তিনি সন্ত রবিদাস এবং ভগবান রামের শিক্ষা অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মন্দির কমিটির সমন্বয়কারী অশোক পালিওয়াল জানিয়েছেন, “এই বছরে (২০২৫) মহাদেবগড় মন্দিরে এক ডজনেরও বেশি ঘর ওয়াপসি অনুষ্ঠান হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে আসছে। আমরা কোনো জোরপূর্বক ধর্মান্তরণে বিশ্বাস করি না; যারা পূর্ণ বিশ্বাস ও বোঝাপড়া নিয়ে আসেন, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়।” তিনি আরও জানান, এই অনুষ্ঠানে ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সম্পূর্ণভাবে মেনে চলা হয়েছে।
এই ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে অনেকে এই পরিবারকে স্বাগত জানিয়েছেন।@DebashishHiTs পোস্টে বলা হয়েছে, “হাসিনা বীবী, এখন রুক্মিনী, তাঁর ছেলেদের সঙ্গে সনাতন ধর্মে ফিরেছেন। ধর্মীয় বন্ধনের দ্বারা দমিয়ে রাখা এই পরিবার বৈদিক রীতিতে শান্তি খুঁজে পেয়েছে।” তবে, কিছু সমালোচক এই ধরনের ঘটনার উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
Ghar Wapsi in #MadhyaPradesh.
Hasina Bibi, now Rukmini, along with her sons Farid (Akshay), Aslam (Ajay), and Rashib (Rajkumar), courageously left Islam and embraced Sanatan Hindu Dharma at Mahadevgarh Temple in #Khandwa, MP.
Welcome them to Sanatan Hindu Dharma. pic.twitter.com/0S2jxHrY9u
— Hindu Voice (@HinduVoice_in) July 2, 2025
মধ্যপ্রদেশে এই ধরনের ঘর ওয়াপসি আন্দোলন বাড়ছে, বিশেষ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর মতো সংগঠনের উদ্যোগে। এই সংগঠনগুলো বিশ্বাস করে যে অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান পরিবার ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, এবং এখন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে আসছে। তবে, এই আন্দোলন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ অনেকে এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।
রুক্মিনী ও তাঁর পরিবারকে মন্দিরে ভগবদ্গীতা, রামায়ণ এবং হিন্দু সংস্কৃতির পরিচিতিমূলক গ্রন্থ উপহার দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিতরা তাঁদের ধর্মীয় জীবনে সম্পূর্ণ রূপান্তরের জন্য আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘটনা কেবল একটি ধর্মীয় রূপান্তর নয়, বরং ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্মিলনের একটি প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি ভারতের ধর্মীয় বৈচিত্র্য এবং সহাবস্থানের একটি উদাহরণ, যা দেশের সামাজিক তাঁবুকে আরও সমৃদ্ধ করে।