বর্তমানে ভারত সরকারের নতুন কর সংস্কার উদ্যোগ দেশের আর্থ-সামাজিক চিত্রকে শুধু পাল্টে দিচ্ছে না, বরং জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতাকে কেন্দ্র করে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে—স্বাস্থ্যই সম্পদ। গত বুধবার ঘোষিত নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, ফিটনেস ও ওয়েলনেস সম্পর্কিত পণ্য ও সেবার ওপর কর হার কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর পণ্য ও সেবাকে আরও সাশ্রয়ী করছে, অন্যদিকে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Pm Modi) ‘ফিট ইন্ডিয়া’ আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী মোদী (Pm Modi) তাঁর সাম্প্রতিক স্বাধীনতা দিবস ভাষণে দেশের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন, তার মধ্যে স্থূলতা বা মোটা হওয়া একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই মন্তব্যের পিছনে রয়েছে এক গভীর সামাজিক উদ্বেগ। তথ্য বলছে, বিগত এক দশকে ভারতে মোটা বা অতিরিক্ত ওজনধারী মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শহুরে জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এসব কারণেই স্বাস্থ্যহানি ঘটছে ব্যাপক হারে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের নতুন কর সংস্কার শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বার্তা—স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন, সরকার পাশে রয়েছে।
ফিটনেস সেন্টার, যোগ ব্যায়াম ক্লাস, স্পোর্টস এক্সেসরিজ, স্বাস্থ্যসম্পর্কিত পুষ্টিকর খাদ্য, এবং ওয়েলনেস থেরাপির ওপর কর কমিয়ে দেওয়ার ফলে এই সেক্টরগুলিতে আগ্রহ বাড়বে সাধারণ মানুষের। অনেকেই আগে ব্যায়ামাগারে যেতে বা যোগ চর্চায় অংশ নিতে পিছপা হতেন খরচের চিন্তায়। এখন সেগুলো সাশ্রয়ী হওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার হবে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।
এই সিদ্ধান্ত আরও এক অর্থে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফিটনেস ও ওয়েলনেস ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত, যেখানে তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কম ট্যাক্সের ফলে ব্যবসাগুলি আরও প্রসারিত হতে পারবে, যার ফলে নতুন ইনভেস্টমেন্ট এবং স্টার্টআপ গড়ে উঠবে এই খাতে।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। স্কুল, কলেজে ফিটনেস ও স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়বে, সরকার যদি এই উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করে। স্বাস্থ্যবান নাগরিকই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি। তাই জাতীয় স্বার্থে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
তবে শুধুমাত্র কর কমানোই যথেষ্ট নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্যাম্পেইন, স্কুল পর্যায় থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষার অন্তর্ভুক্তি, এবং স্থানীয় স্তরে ফিটনেস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উন্নয়ন—এই পদক্ষেপগুলিও নেওয়া প্রয়োজন, যাতে জনগণের মাঝে এই পরিবর্তনের প্রভাব বাস্তবিক অর্থে দৃশ্যমান হয়।
শেষ কথা, ভারতের এই নতুন কর সংস্কার শুধু একটি অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়—এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা। ফিট ভারত গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, এবং তা ভারতকে শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক কল্যাণের দিক থেকেও এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।