ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় নকশালবিরোধী অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর বড় সাফল্য (Naxals)। শনিবার সন্ধ্যায় বাসাগুড়া এলাকায় নকশালদের সঙ্গে সংঘর্ষে চার পুরস্কার ঘোষিত নকশাল নিহত হয়েছে। এই চার নকশালের প্রত্যেকের মাথায় ছিল ১৭ লক্ষ টাকার পুরস্কার। অভিযানে ইনসাস রাইফেল, এসএলআর রাইফেল, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
বস্তর রেঞ্জের পুলিশ মহানির্দেশক পি. সুন্দররাজ জানিয়েছেন, এই অভিযানে ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি), স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ), বস্তর ফাইটার্স, কোবরা (কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন), সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), ইন্দো-তিব্বতি বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) এবং শসস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর যৌথ বাহিনী অংশ নিয়েছিল।
অভিযানটি শনিবার সন্ধ্যায় বিজাপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম বনাঞ্চলের মুরাডোঙ্গা জঙ্গলে শুরু হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী জানতে পারে যে, এই এলাকায় নকশাল নেতারা লুকিয়ে রয়েছে। এরপর ডিআরজি বিজাপুরের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে।
নকশালরা নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখে গুলি চালালে জবাবে বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। রবিবার দুপুর পর্যন্ত রুকরুকি গুলি বিনিময়ের পর চার নকশালের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে ঘটনাস্থলের সঠিক অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি।
ছত্তিশগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা এই সাফল্যের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “দক্ষিণ-পশ্চিম বস্তরের বিজাপুর এলাকায় চার ইউনিফর্ম পরা নকশাল নিহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ইনসাস এবং এসএলআরের মতো রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
আমি জওয়ানদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।” তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার নকশালবাদ নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আক্রান্ত এলাকায় রাস্তা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কাজ চলছে।
এই অভিযান ছত্তিশগড়ে ২০২৫ সালে নকশালবিরোধী অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২২৫ জন নকশাল নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জন বস্তর বিভাগের বিজাপুর, বস্তর, কাঙ্কের, কোন্দাগাঁও, নারায়ণপুর, সুকমা এবং দান্তেওয়াড়া জেলায় নিহত হয়েছে। এছাড়া, ২০২৪ সালে ২৯০ জন নকশাল নিহত, ১০৯০ জন গ্রেপ্তার এবং ৮৮১ জন আত্মসমর্পণ করেছে।
এই অভিযানের আগেও বিজাপুরে একাধিক সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গত ১৮ জুলাই নারায়ণপুর জেলার আবুঝমাড় অঞ্চলে ছয় নকশাল নিহত হয় এবং একে-৪৭, এসএলআর-এর মতো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, মে মাসে ‘অপারেশন কাগর’-এ ২৭ জন নকশাল নিহত হয়, যার মধ্যে ছিলেন সিপিআই (মাওবাদী)-এর জেনারেল সেক্রেটারি নম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু, যার মাথায় ছিল ১.৫ কোটি টাকার পুরস্কার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নকশালবাদ নির্মূলের লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতকে নকশালমুক্ত করব, যাতে কোনও নাগরিককে এর জন্য জীবন দিতে না হয়।” এই লক্ষ্যে বস্তর অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান তীব্রতর হয়েছে।
তবে, অভিযানের মধ্যে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। গত জানুয়ারিতে বিজাপুরে একটি অভিযানে ছয় মাসের এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাগেল সরকারের সমালোচনা করে সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছেন।
এআইআইএমএস ভুবনেশ্বরে গ্রেপ্তার নার্সিং অফিসার, যৌন হয়রানির অভিযোগে বিক্ষোভ
এই অভিযান সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্যের প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আগামী দিনে এই অভিযান নকশালবাদ নির্মূলে কতটা সফল হবে, তা দেখার বিষয়।